ঠেকানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের

ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) একের পর এক উদ্যোগ নিলেও তাতে কাজ হচ্ছে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2014, 03:15 AM
Updated : 3 August 2014, 12:42 PM

ভোটার হওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের অব্যাহত তৎপরতার কারণে ‘রোহিঙ্গা অধ্যুষিত’ বিশেষ এলাকার আওতা বাড়িয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এতে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় কতো সংখ্যক রোহিঙ্গা ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন- তা জানাতে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার জানান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে রোববার এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বর্তমানে দেশজুড়ে ধাপে ধাপে ভোটার তালিকা হালনাগাদের (নতুনদের অন্তর্ভুক্তি, স্থানান্তর, মৃতদের বাদ ও তথ্য সংশোধন) কাজ চলছে। এ পর্যন্ত দুই ধাপে প্রায় চারশ’ উপজেলায় ভোটার নিবন্ধনে তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে।

এর মধ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত তিন জেলার ১৪টি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ বিবেচনা করে আগেই ভোটার তালিকা হালনাগাদে বিশেষ ফরম ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছিল কমিশন।

রোববার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ভৌগলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঊপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির অধিবাসীরা প্রায়ই ঠিকানা পরিবর্তন করেন। অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়।

“ধারণা করা যাচ্ছে যে, অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা ১৪ উপজেলা ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার অন্যত্রও বসতি স্থাপন করেছে।”

ফাইল ছবি

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার প্রবণতার কথা স্বীকার করে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী তিনটি জেলার ১৪টি উপজেলায় ভোটার নিবন্ধনের জন্য বিশেষ ফরম ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ নজরদারির পরও কেউ কেউ ভোটার হতে চাইছে। তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”

সম্প্রতি চট্টগ্রামের পটিয়ায় হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে রোহিঙ্গা পাড়ার ‘সন্ধান’ পাওয়ার কথাও জানান তিনি।

আবদুল মোবারক গত সপ্তাহে কমিশন সভায় জানান, পটিয়া উপজেলায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা ভোটার এবং সেখানে একটি রোহিঙ্গা পাড়া আছে বলে জানতে পেরেছেন তিনি।

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আরো মনোযোগী হওয়ারও তাগিদ দেন তিনি।

এর আগে বিশেষ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত ১৪টি উপজেলা হচ্ছে - কক্সবাজারের সদর, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী, বান্দরবানের সদর, আলিকদম, লামা, নাইক্ষংছড়ি এবং রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই।

এদিকে প্রথম পর্যায়ের হালনাগাদে ভোটারযোগ্য নারীদের পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

দেশজুড়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রথম পর্যায়ে দেশের ১৮১ উপজেলায় ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৮ জন পুরুষ নতুন ভোটার হয়েছেন। এসময় নারী ভোটার হয়েছেন ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭১ জন।

দ্বিতীয় পর্যায়ে বর্তমানে ২১৩ উপজেলায় হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। বাকি উপজেলাগুলোর কাজ শেষ করা হবে আগামী নভেম্বরের মধ্যে।

এ ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সহযোগিতা চেয়ে রোববার একটি চিঠি দিয়েছেন ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তার। নারীদের ভোটার হতে উৎসাহ দিয়ে প্রচার ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।

এর আগে নারী ভোটার অন্তর্ভুক্তির হার কম হওয়ার বিষয়ে জানিয়ে কমিকশন সভায় বলা হয়, “কিছু কিছু এলাকায় মহিলারা পর্দানশীন হওয়ায় তারা ভোটার হতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। বিদেশ ফেরতদের মধ্যেও মহিলার সংখ্যা কম হওয়ায় এ বছর নিবন্ধনে তাদের হার অপেক্ষাকৃত কম।”

ওই সভাতেই মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহায়তা নেয়ার কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

বর্তমানে দেশে ৯ কোটি ১৯ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে।