পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে যে বাংলাদেশ সমস্যা পোহাচ্ছে, তা ‘আনান কমিশন’ মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
Published : 31 Jan 2017, 06:51 PM
মিয়ানমার সরকার গঠিত এই কমিশনের বাংলাদেশ সফররত সদস্যদের সঙ্গে মঙ্গলবার সচিবালয়ে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।
রাখাইন প্রদেশে চলা সঙ্কট রোহিঙ্গাদের ফের শরণার্থী জীবনে প্ররোচিত করায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের প্রেক্ষাপটে এই কমিশন গঠন করে মিয়ানমার সরকার।
গত অগাস্টে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে গঠিত নয় সদস্যের এই কমিশন ‘আনান কমিশন’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
এই কমিশনের চার সদস্য কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে গিয়ে শরণার্থীদের অবস্থা ঘুরে দেখার পর মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান।
তাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন আহম্মেদসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন।
আসাদুজ্জামান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের তুলে ধরা বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে দ্বি-মত পোষণ করেনি সফররত প্রতিনিধি দল।
“আপনারা তো জানেন, আমরা একটি সমস্যা নিয়ে আছি। তাহলো রোহিঙ্গা সমস্যা। আজ থেকে নয়। আমরা কয়েকযুগ থেকে এ সমস্যার মুখোমুখি।”
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে তিন দশক আগে থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা কয়েক লাখে পৌঁছায়।
নিপীড়িত রোহিঙ্গারা ২০১২ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইলে তখন বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত আটকে দেয়। এরপর গত অক্টোবরে আবার রাখাইনে সঙ্কট দেখা দিলে রোহিঙ্গারা ফের বাংলাদেশমুখী হলেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশকে সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও তা প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ঢাকার পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়।
সীমান্তে পাহারা কড়া করলেও গত কয়েক মাসে ৬৭ হাজার রোহিঙ্গা্ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে; এক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনার কথাও জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আনান কমিশনের সদস্যদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
“যতটুকু আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি সেই সংখ্যাটা তাদেরকে বলা হয়েছে। অফিশিয়ালি মোর দেন হাফ এ মিলিয়ন রোহিঙ্গা এখানে আছে।”
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনরা এই মুসলিম জাতিগোষ্ঠীকে তাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। তাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের আহ্বানেও দেশটি সাড়া দিচ্ছে না।
বিশাল সংখ্যার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে নিয়ে বাংলাদেশ কী কী সমস্যা মোকাবেলা করছে, আনান কমিশনের সদস্যদের কাছে তা তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
“তাদের কারণে মাইলের পর মাইল বন শেষে হয়ে গেছে। সামাজিক জীবনেরও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের নিয়ে আমাদের সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। এসব কথা আমরা তাদের বলেছি।”
মাদক, সন্ত্রাস, পাচারসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতায়ও রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়ার তথ্য মিয়ামারের কমিশনকে জানান আসাদুজ্জামান কামাল।
সেইসঙ্গে মিয়ানমারে নিজ দেশে যে রোহিঙ্গারা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে, তার কথাও বলেন তিনি।
“এরা তাদের জীবনটা নিয়ে এখানে আসছিল। তাদের অধিকাংশই আহত এবং তারা যত মহিলারা আসছে এর ৮০ শতাংশ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কাজেই এরা খুব খারাপ পজিশনে এসেছে এখানে। আমরা বলেছি আপনারা (প্রতিনিধি দল) একটা প্রচেষ্টা নেন। যাতে তারা দেশে ফেরত যেতে পারে এবং আমরা এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।”
প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে মিয়ানমার এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে বলে প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রতিনিধি দলটি এক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নিতে পারে এবং মিয়ানমার সরকার সে দায় নেবে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “দেখুন, মিয়ানমার সরকার তো এখানে আসেনি। এখানে একটি কমিশন এসেছে।
“কমিশন বলেছে, তারা চেষ্টা করবে এবং আমাদের কাছে যা শুনে গেলেন, তা প্রতিবেদন দেবেন। তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করবে, যাতে এই সমস্যার সমাধান হয়।”
প্রতিনিধি দলের সরেজমিন পরিদর্শনে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যের বিপরীত কিছু পাওয়ার কথা বলেছে কি না- এই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যদি অন্য কিছু থাকত, তাহলে তো নিশ্চয়ই বলতো। তার মানে তারা (প্রতিনিধি দল) স্বীকার করে নিয়েছে, আমরা যা বলেছি।”