মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন অভিযানের মুখে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে চাইছেন।
Published : 16 Nov 2016, 10:33 PM
বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যটিতে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন মিয়ানমারের মুসলিম নাগরিকদের অনেকে।
প্রতিবেশী দেশটিতে এই পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা পাহারা জোরদার করেছে।
কক্সবাজারের বিজিবির ২ ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. আবু রাসেল সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার আব্রাং সীমান্ত হয়ে নৌকা যোগে নাফ নদী পার হয়ে ৮০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায়।
রোহিঙ্গাদের কয়েকটি নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ায় সেগুলো এখন সমুদ্রে ভেসে আছে বলে রয়টার্স জানায়।
মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গারা কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশে আসছিল। বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করছে বাংলাদেশ।
২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে ভয়াবহ দাঙ্গার পর অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে চাইলেও তখন বাংলাদেশ সীমান্ত আটকে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকারের দাবি, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহনের সঙ্গে নতুন আরও শরণার্থী নেওয়া অসম্ভব। তাছাড়া রোহিঙ্গা বাংলাদেশের নাগরিক সেজে বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
ওই দাঙ্গার পর এবারই রাখাইন রাজ্যে সবচেয়ে মারাত্মক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটছে বলে রয়টার্সের ভাষ্য। পলায়নরত রোহিঙ্গাদের গুলি করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা রয়টার্সকে বলেন, “স্থানীয়রা আমাকে বলেছে, নদীর পাড়ে প্রায় ৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী নদীর পাড়ে অপেক্ষারতদের ভিড়ের মধ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।”
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যু হয়। এরপরই আশেপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ধর পাকড় শুরু হয়।
গত সাত দিন ধরে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান চলছে।
সেখানে ত্রাণকর্মী ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এবং গ্রামগুলোতে চিরুনি তল্লাশি অভিযান চলছে।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্য সরকারের সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল তাইন লিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মিয়ানমার পুলিশের মেজর কিয়াও মিয়াও বলেন, “লোকজন পালিয়ে যাচ্ছে, কারণ তারাই সেনাবাহিনীর উপর হামলার চেষ্টা করেছিল। গ্রামবাসীরা জঙ্গি হয়ে গেছে, এমনকি গ্রামের নারীরাও জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছে।”
মঙ্গলবার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত সাত দিনের সহিংসতায় রোহিঙ্গা জঙ্গি দলের ৬৯ জন সদস্য এবং মিয়ানমার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ সদস্য নিহত হয়েছে।
সাত মাস আগে নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অন সান সু চির দল মিয়ানমারের ক্ষমতায় এলেও রাখাইন রাজ্যের সংঘাত নিরসনে এখনও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
রোহিঙ্গা নির্যাতিনের বিষয়ে মিয়ানমান সরকার বরাবরই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে আসছে।