রোহিঙ্গা শনাক্তে কমিটি সারাদেশে

বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতের পাশাপাশি এই শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে চট্টগ্রাম বিভাগ এবং কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার জন্য চারটি কমিটি করেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2017, 03:11 PM
Updated : 29 Jan 2017, 03:13 PM

এছাড়া দেশের সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নে ‘সীমিত আকারে’ একই ধরনের কমিটি গঠনের নির্দেশনাসহ সেসব কমিটির কার্যপরিধি বেঁধে দিয়ে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত ৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে এক সভায় ‘অবৈধভাবে অনুপ্রেবশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ’ কমিটি গঠনের এই সিদ্ধান্ত হয়।

মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে আশ্রয় নেওয়া ৫ লাখের বেশি বেশি রোহিঙ্গার ভার বহনের মধ‌্যে সম্প্রতি ফের অনুপ্রবেশের মধ‌্যে সরকার এই পদক্ষেপ নিল।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর দেশটির প্রায় ৬৫ হাজার মুসলিম নাগরিক কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে বলে মন্ত্রিপরিষদ জানায়।

এসব শরণার্থীদের অনেকেই বাংলাদেশের ‍মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাচ্ছে উল্লেখ করে আদেশে বলা হয়েছে, “এদের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার, স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির

কমিটিগুলোকে মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশ রোধে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ, চিহ্নিতকরণ এবং তারা যাতে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যেতে না পারে, সেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তা এবং চিহ্নিত শরণার্থীরা নির্ধারিত এলাকার বাইরে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার বা ক্যাম্প এলাকায় পুশ করতেও বলা হয়েছে জেলা কমিটিগুলোকে।

জেলা কমিটিগুলোকে মিয়ানমার থেকে আসা রেজিস্ট্রার্ড ও আন-রেজিস্ট্রার্ড শরণার্থীদের পর্যায়ক্রমে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গার চরে স্থানান্তরে সহায়তা করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবসনের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি ও পররাষ্ট সচিবের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সকে সহযোগিতা এবং উপজেলাভিত্তিক টাস্কফোর্স/উপজেলা কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।

এই কমিটিকে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিটি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বিজিবির আঞ্চলিক কমান্ডার, উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবসন কমিশনারকে সদস্য করা হয়েছে।

এই কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে ডিজিএফআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস প্রধান, কোস্ট গার্ডের জোনাল কমান্ডার; চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক, আনসার ও ভিডিপির পরিচালক এবং আঞ্চলিক বন সংরক্ষককে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটিতে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এই কমিটি প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি বা গণ্যমান্য ব্যক্তিকে কমিটির সদস্য করতে পারবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটিকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত জেলা কমিটিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে বলা হয়েছে।

বিভাগীয় কমিটিকে জেলা কমিটির কার্যপরিধির বিষয় নিয়ে আলোচনা, কমিটির কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা দপ্তরে পাঠানো ছাড়াও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকারকে সুপারিশ এবং বিশেষ প্রয়োজন ও অবস্থা অনুযায়ী কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে।

জেলা কমিটি

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলা কমিটিতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসককে সভাপতি করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ঠেকাতে এমন পাহারা এখন কক্সবাজার সীমান্তে

সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, বিজিবির সেক্টর কমান্ডারের প্রতিনিধি/কমান্ডিং অফিসার, ডিজিএফআইয়ের কর্নেল জিএস, এনএসআইয়ের যুগ্ম/উপ-পরিচালক, আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ডার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, কোস্ট গার্ডের স্টেশন কমান্ডার, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাকে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

এই কমিটিও প্রয়োজনে যে কোনো কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করতে পারবে।

অন্য কমিটির রূপরেখা

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার কমিটির সঙ্গে যতদূর সম্ভব সঙ্গতি রেখে অন্য জেলার ডিসিদের অনুরূপ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।

জেলা কমিটিগুলোকে মিয়ানমারের নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, জনগণ ও গোয়েন্দাদের সহায়তা নিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের চিহ্নিতকরণ ও ক্যাম্প এলাকায় পুশের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যেন মিশতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলা কমিটির সভায় আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করতে হবে।

জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যথাক্রমে জেলা ও উপজেলা কমিটির সভায় উপদেষ্টা হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন।

ইউএনও উপজেলা কমিটির সভাপতি, মেয়র সংশ্লিষ্ট পৌরসভা কমিটির সভাপতি, ওয়ার্ড কমিশনার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হবে।

জেলা কমিটিগুলোকে পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর কার্যক্রম পরিবীক্ষণ করবে।