এক রাতে ঢাকা ও রাজশাহীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত তিন ‘জেএমবি সদস্যই’ বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 07 Jun 2016, 05:59 PM
নিহতদের একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি।
মঙ্গলবার ভোররাতে ঢাকার কালশীতে ও রাজশাহীর গোদাগাড়িতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তারা নিহত হন। রাজশাহীতে নিহতের নাম-পরিচয় পুলিশ সকালে জানালেও ঢাকায় নিহত দুজনের কথা তখন জানা যায়নি।
দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সন্ত্রাস দমন ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে নিহতদের বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ঢাকায় নিহত দুজন হলেন- তারেক হাসান নিলু ওরফে ওসমান (৩২) এবং সুলতান মাহমুদ ওরফে কামাল ওরফে রানা (৪০)।
মনিরুল বলেন, এদের মধ্যে জয়পুরহাটের বাসিন্দা ওসমান জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতা। অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ড ছাড়াও দিনাজপুরের কাহারোলে ইসকন মন্দিরে হামলায় জড়িত ছিলেন তিনি।
‘জেএমবির মধ্যম পর্যায়ের নেতা’ কামাল বগুড়ার শিয়া মসজিদে গুলি চালিয়ে একজনকে হত্যা মামলার আসামি। তার বাড়ি দিনাজপুরে।
ওই হত্যাকাণ্ডে ওসমান সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “ওই হত্যায় এর আগে জেএমবির এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আমরা জানতে পারি, নিহত শিক্ষক রেজাউল করিম হত্যায় সে (ওসমান) সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছে এবং উনাকে সে নিজের হাতে কুপিয়েছে।”
গত ১০ ডিসেম্বর দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) একটি মন্দিরে কীর্তন ও ধর্মসভা চলার সময় সন্ত্রাসীদের গুলি ও হাতবোমা হামলায় দুজন আহত হন। সে সময় হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অস্ত্রসহ এক জেএমবি সদস্যকে ধরে পুলিশে দেয় জনতা।
ওই হামলায়ও ওসমানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত অন্য যুবক কামালকে নিয়ে তিনি বলেন, “বগুড়ার শিয়া মসজিদে যে গুলি এবং বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তার সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।”
এদিকে রাজশাহীতে নিহত জামাল উদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কালীনগর লক্ষ্মীপুর গ্রামের তাবজুল হকের ছেলে বলে গোদাগাড়ী থানার ওসি ফরহাদ হোসেন জানান।
তিনি বলেন, গত বছর বাগমারার সৈয়দপুর চকপাড়া আহমদিয়া মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে নিহত যুবককে সেখানে বোমা নিতে সহযোগিতা করেছিলেন জেএমবির সদস্য জামাল।
গত ২৫ ডিসেম্বর ওই ঘটনায় নিহতের পরিচয় না পাওয়ায় তার লাশ দাফন করেছিল আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।
ওসি বলেন, সোমবার জামালকে আটকের পর মসজিদে বোমায় নিহত ওই যুবকের পরিচয় জানতে পেরেছেন তারা। তিনি জামালের পাশের গ্রাম রূপনগরের আবু সালেকের ছেলে তারেক আজিজ।
তারেকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার মা তাসলিমাকে আটক করা হয়েছে এবং তিনি ওই ঘটনায় নিহত যুবক তার ছেলে বলে স্বীকার করেছেন বলে জানান ওসি।
জামাল ও তাসলিমাকে নিয়ে তাদের আরেক সহযোগীকে ধরতে রাত ৩টার দিকে ফরাদপুর চাপড়া গ্রামে পুলিশ অভিযানে গেলে জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলিতে জামাল নিহত হন বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল, পাঁচটিট হাতবোমা ও একটি রামদা উদ্ধারের কথা বলেছেন তিনি।
এদিকে ঢাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের (ঢাকা দক্ষিণ) একটি অভিযানের সময় সন্দেহভাজন ওই জঙ্গিরা গুলি ছুড়লে পুলিশও ‘আত্মরক্ষার জন্য’ গুলি চালায়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।”
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষক, ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, বিদেশি নাগরিক, ভিন্ন মতের ইসলামী ভাবধারার অনুসারী এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার ঝিনাইদহে এক হিন্দু পুরোহিতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর দুদিন আগে চট্টগ্রামে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে জঙ্গি দমনে ভূমিকা রাখা পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে।
এসব হত্যাকাণ্ডের নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্যদের দায়ী করে অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল বলেন, “দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে জেএমবি এই হত্যাগুলো সংঘটিত করছে।
“আমরা যদ্দুর জানতে পেরেছি, এই অপারেশনগুলোতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, অর্থাৎ যারা খুনি তাদের অধিকাংশই শিবির (ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে আসা।”
এসব হত্যাকাণ্ডে আইএস কিংবা আল কায়দার নামে দায় স্বীকারের বার্তা এলেও তা নাকচ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ইঙ্গিতও জামায়াত-শিবিরের দিকে।
এর প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার জামায়াতের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার ‘হীন উদ্দেশ্যেই’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘মিথ্যা বক্তব্য’ দিচ্ছেন।
“তারা (সরকার) ইতোপূর্বেও বহুবার এ ধরনের মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন এবং আমরা যথারীতি তার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছি যে, কোনো হত্যাকাণ্ডের সাথেই জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সম্পর্ক নেই।”