‘ব্যাপক অনিয়ম বা ভোট ডাকাতির’ কোনো খবর নির্বাচন কমিশন পায়নি। সিইসির ভাষায়, উপ নির্বাচন ‘সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু’ হয়েছে ভোট।
Published : 01 Feb 2023, 05:00 PM
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয় সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই; ভোটের হার ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ব্যাপক অনিয়ম, ভোট ডাকাতি হয়েছে- এমন কোনো তথ্য পাইনি। আমরা বলব, সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে ভোট।”
এদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সাত শতাধিক কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়। এ নির্বাচনে কোথাও সিসি ক্যামেরা ছিল না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভোটকেন্দ্রের বাইরে বোমাবাজি ছাড়া সারাদিন আলোচনার মূল বিষয় ছিল ভোটার স্বল্পতা।
সিইসি বলেন, “উপস্থিতির হার তুলনামূলকভাবে কম ছিল। আনুমানিক ১৫/২০/২৫/৩০ শতাংশ হতে পারে। এটা নিশ্চিত করে এখনও বলা যাবে না, অপেক্ষা করতে হবে।”
এর আগে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে ঢাকা ১০ আসনের উপ নির্বাচনে ইভিএমে সবচেয়ে কম ভোট পড়ার রেকর্ড রয়েছে। ওই দিন ভোট পড়ার হার ছিল ৫.২৮ শতাংশ।
তারও আগে ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমের ব্যাপক প্রচারের মধ্যে ভোটারের খরা দেখেছিল ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে। সেবার দক্ষিণ সিটিতে ২৯ শতাংশ ও উত্তরে ভোটের হার ছিল ২৫.৩ শতাংশ।
আর কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে সবশেষ উপ নির্বাচন গাইবান্ধা ৫ আসনে প্রায় ৩৮% ভোট পড়েছে।
এদিন ছয় আসনে উপ নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসন এবং ইসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ভোটের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করা হয়েছে জানিয়ে সিইসি আউয়াল বলেন, “অনিয়ম বা কারচুপির উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়ে নজর রেখেছি, সেখানেও বিরূপ কোনো তথ্য পেরিবেশিত হতে দেখিনি।
"নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তথ্য পেয়েছি, দুয়েকটি জায়গায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে; একটি ককটেল তাজা পাওয়া গেছে। দুয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে যেটা কেন্দ্রের বাইরে।”
৬ আসনে ভোটের আগে সব ছাপিয়ে আলোচনায় আসিফ অন্তর্ধান
সিইসি বলেন, “আমরা যে তথ্য পেয়েছি, সিসি ক্যামেরা ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটগ্রহণ বলা চলে সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে হয়েছে। ইভিমের ভোট, দু’চার ঘণ্টার মাধ্যমে ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাযালয়ে ঘোষণা শুরু হবে।”
অনেক কেন্দ্রে ভোটকক্ষে অবাঞ্ছিত লোকের উপস্থিতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, দুয়েকটি কেন্দ্রে এমন তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। একটি কেন্দ্রে এক ভদ্রমহিলা তার দুটো বাচ্চাকে নিয়ে ঢুকেছে, আরেকটি জায়গায় এক ভদ্রমহিলা অসুস্থ ভোটারকে সহায়তা করতে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন।
“এগুলো হতে পারে। আমরা এগুলোকে খুব গুরুতর বা ব্যাপক (অনিয়ম) মনে করছি না, যেটা ভোটের ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে। ওই ধরনের ঘটনা মনে হয়নি। কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে গণমাধ্যমে এখান থেকে দেখছিলাম- এমন কিছু দেখিনি যে ভোটকেন্দ্রে ভোট ডাকাতি হচ্ছে, ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। সেদিক থেকে আমরা বলব সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে ভোট।”
উপস্থিতি কম কেন, সেই ব্যাখ্যায় সিইসি বলেন, “কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ায় উপস্থিতি কম ও নিরুত্তাপ হতে পারে।”
আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের সহায়তায় সন্তোষ প্রকাশ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সফল ও অর্থবহ করার বিষয়ে কমিশনের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশে বিএনপির সংসদ সদস্যরা একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন তারা সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তাদের মধ্যে ছয়জনের ছেড়ে যাওয়া আসনে উপ নির্বাচন হল মঙ্গলবার। আর রুমিন ফারহানার পদত্যাগে শূন্য হওয়া সংরক্ষিত নারী আসনে (মহিলা আসন-৫০) ভোটের তারিখ ওই ছয় আসনের উপনির্বাচনের পর ফয়সালা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ভোট তথ্য
• ঠাকুরগাঁও-৩: ভোটকেন্দ্র ১২৮টি আর ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ জন।
• বগুড়া-৪: ভোটকেন্দ্র ১১২টি। ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন।
• বগুড়া-৬: ভোটকেন্দ্র ১৪৩টি। ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন।
• চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২: ভোটকেন্দ্র ১৮০টি। ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩: ভোটকেন্দ্র ১৭২টি, মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন।
• ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২: ভোটকেন্দ্র ১৩২টি, ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন।
প্রার্থী যারা
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ৬ প্রার্থী: মো. সিরাজুল ইসলাম- বিএনএফ; হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ- জাতীয় পার্টি; মো. ইয়াসিন আলী- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (১৪ দল); মো. শাফি আল আসাদ- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, মো. এমদাদুল হক- জাকের পার্টি এবং গোপাল চন্দ্র রায়- স্বতন্ত্র।
বগুড়া-৪ আসনে ৯ প্রার্থী: একেএম রেজাউল করিম তানসেন- জাসদ (১৪ দল); শাহীন মোস্তফা কামাল- জাতীয় পার্টি; আব্দুর রশিদ সরদার- জাকের পার্টি; মো. তাজ উদ্দীন মণ্ডল- বাংলাদেশ কংগ্রেস। আর মো. গোলাম মোস্তফা, আলহাজ্ব মো. ইলিয়াস আলী, মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম), মো. কামরুল হাসান সিদ্দিকী (জুয়েল) এবং মো. আব্দুর রশিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বগুড়া-৬ আসনে ১১ প্রার্থী: মো. আফজাল হোসেন- গণফ্রন্ট; মো. এমদুদুল হক ইমদাদ- জাসদ; মো. নূরুল ইসলাম ওমর- জাতীয় পার্টি; রাগেবুল আহসান রিপু- আওয়ামী লীগ; মোহাম্মদ ফয়সাল বিন শফিক- জাকের পার্টি; মো. নজরুল ইসলাম- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। স্বতন্ত্র প্রার্থী- মো. আব্দুল মান্নান, মো. রাকিব হাসান, মাছুদার রহমান হেলাল, মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) এবং মো. সরকার বাদল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ৬ প্রার্থী: মু. জিয়াউর রহমান- আওয়ামী লীগ; মো. নবীউল ইসলাম- বিএনএফ; মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক- জাতীয় পার্টি; মো. গোলাম মোস্তফা- জাকের পার্টি; মু. খুরশিদ আলম ও মোহাম্মদ আলী সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ৩ প্রার্থী: মো. আব্দুল ওদুদ- আওয়ামী লীগ; কামরুজ্জামান খান- বিএনএফ; এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সামিউল হক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ৫ প্রার্থী: মো. আব্দুল হামিদ- জাতীয় পার্টি; জহিরুল ইসলাম জুয়েল- জাকের পার্টি। স্বতন্ত্র প্রার্থী-অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধা, আবদুস সাত্তার ভূঞা (উকিল আবদুস সাত্তার), আবু আসিফ আহমেদ।