সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে; তবে এবার সিসি ক্যামেরা রাখা হয়নি।
Published : 01 Feb 2023, 08:20 AM
বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনে নতুন জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে শুরু হয়েছে ভোট।
নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় নির্ধারিত সময়েই আসনগুলোতে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
এই ছয়টি আসনের মধ্যে তিন আসনে প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ; ঠাকুরগাঁও-৩ এবং বগুড়া-৪ আসন দুটি ছেড়ে দিয়েছে জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে তারা প্রার্থী তো দেয়নি, উপরন্তু দলটির নেতা-কর্মীরা সমর্থন দিচ্ছেন গতবারের এমপি উকিল সাত্তারকে, যিনি বিএনপি ছেড়ে এবারও ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
জাতীয় পার্টি ছয় আসনে প্রার্থী দিলেও টিকে আছে পাঁচ আসনে; একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয় বাছাইয়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টির মো. আবদুল হামিদ প্রার্থী থাকলেও সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন তিনি পাচ্ছেন না।
বগুড়ার দুটি আসনেই প্রার্থী হয়েছেন ইউটিউবার আশরাফুল আলম (হিরো আলম)। তিনি এর আগে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন ভোটকেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের কাছে তার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটিও ছিল বেশ আলোচিত।
দুটিতে প্রার্থী হয়ে শুরুতে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন হিরো আলম। তবে দুদিন বাদেই আলোচনায় তাকে ছাড়িয়ে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার।
তবে শেষ দিকে এসে তাদের দুজনকে ছাপিয়ে যান আবু আসিফ আহমেদ। ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে না থেকেও আলোচনায় উকিল আব্দুস সাত্তারের এই প্রতিদ্বন্দ্বী। সাত্তারের মতে তিনিও বিএনপি ছেড়ে ভোটের মাঠে নামেন, তবে এ সপ্তাহের শুরু থেকে রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য তিনি। তিনি কোথায়, সেই খোঁজ এখনও মেলেনি, তবে আলোচনা থামেনি।
তাই ছয়টি আসনে উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের সামনে এলে ভোটের প্রস্তুতি ছাপিয়ে আসিফকে নিয়েই ছিল প্রশ্ন। এই নির্বাচন কমিশনার অবশ্য মনে করছেন, আসিফ নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন।
আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নিসা তার স্বামীকে অন্তর্ধানের জন্য পুলিশের দিকে ইঙ্গিত করলেও আনিছুর বলছেন, এর সঙ্গে সরকারি কোনো বাহিনী জড়িত নয় বলে তারা জানতে পেরেছেন।
প্রার্থী যারা
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ৬ প্রার্থী: মো. সিরাজুল ইসলাম- বিএনএফ; হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ- জাতীয় পার্টি; মো. ইয়াসিন আলী- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (১৪ দল); মো. শাফি আল আসাদ- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, মো. এমদাদুল হক- জাকের পার্টি এবং গোপাল চন্দ্র রায়- স্বতন্ত্র।
বগুড়া-৪ আসনে ৯ প্রার্থী: একেএম রেজাউল করিম তানসেন- জাসদ (১৪ দল); শাহীন মোস্তফা কামাল- জাতীয় পার্টি; আব্দুর রশিদ সরদার- জাকের পার্টি; মো. তাজ উদ্দীন মণ্ডল- বাংলাদেশ কংগ্রেস। আর মো. গোলাম মোস্তফা, আলহাজ্ব মো. ইলিয়াস আলী, মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম), মো. কামরুল হাসান সিদ্দিকী (জুয়েল) এবং মো. আব্দুর রশিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
বগুড়া-৬ আসনে ১১ প্রার্থী: মো. আফজাল হোসেন- গণফ্রন্ট; মো. এমদুদুল হক ইমদাদ- জাসদ; মো. নূরুল ইসলাম ওমর- জাতীয় পার্টি; রাগেবুল আহসান রিপু- আওয়ামী লীগ; মোহাম্মদ ফয়সাল বিন শফিক- জাকের পার্টি; মো. নজরুল ইসলাম- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। স্বতন্ত্র প্রার্থী- মো. আব্দুল মান্নান, মো. রাকিব হাসান, মাছুদার রহমান হেলাল, মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) এবং মো. সরকার বাদল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ৬ প্রার্থী: মু. জিয়াউর রহমান- আওয়ামী লীগ; মো. নবীউল ইসলাম- বিএনএফ; মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক- জাতীয় পার্টি; মো. গোলাম মোস্তফা- জাকের পার্টি; মু. খুরশিদ আলম ও মোহাম্মদ আলী সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ৩ প্রার্থী: মো. আব্দুল ওদুদ- আওয়ামী লীগ; কামরুজ্জামান খান- বিএনএফ; এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সামিউল হক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ৫ প্রার্থী: মো. আব্দুল হামিদ- জাতীয় পার্টি; জহিরুল ইসলাম জুয়েল- জাকের পার্টি। স্বতন্ত্র প্রার্থী-অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউল হক মৃধা, আবদুস সাত্তার ভূঞা (উকিল আবদুস সাত্তার), আবু আসিফ আহমেদ।
ভোট তথ্য
ঠাকুরগাঁও-৩: ভোটকেন্দ্র ১২৮টি আর ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৪১ জন।
বগুড়া-৪: ভোটকেন্দ্র ১১২টি। ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯ জন।
বগুড়া-৬: ভোটকেন্দ্র ১৪৩টি। ভোটার ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২: ভোটকেন্দ্র ১৮০টি। ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩: ভোটকেন্দ্র ১৭২টি, মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২: ভোটকেন্দ্র ১৩২টি, ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৯ জন।
সিসি ক্যামেরা নেই, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা
এবার কোনো নির্বানী এলাকায় সিসি ক্যামেরা নেই, তবে সবখানে ইভিএমে ভোট হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “যথারীতি আগে অন্যান্য জায়গায় যে রকম সব প্রস্তুতি আছে। এবার শুধু সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়নি।… সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করার জন্য যা যা করার দরকার, সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।”
অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে রয়েছে জানিয়ে আনিছুর বলেন, “সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে ভোট হবে বলে আশা করি। (অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায়) আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি।”
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হক জানান, ছয় আসনের উপনির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬/১৭ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭/১৮ জন করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাবের সদস্য এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ ৪-৬ প্লাটুন করে বিজিবি, র্যাবের টহল টিম এবং ইসির পর্যবেক্ষক রয়েছে। অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও থাকছে।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশে বিএনপির সংসদ সদস্যরা একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন তারা সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তাদের মধ্যে ছয়জনের ছেড়ে যাওয়া আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১ ফেব্রুয়ারি। আর রুমিন ফারহানার পদত্যাগে শূন্য হওয়া সংরক্ষিত নারী আসনে (মহিলা আসন-৫০) ভোটের তারিখ ওই ছয় আসনের উপনির্বাচনের পর ফয়সালা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।