ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন ও শরিয়াহ আইন প্রণয়নসহ ৪৫টি প্রস্তাব দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন।
Published : 10 Apr 2025, 03:54 PM
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে সংলাপ চলছে তা মে মাসের প্রথমার্ধে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
বৃহস্পতিবার সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মতামত জমা দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
দলগুলোর কাছে সংস্কার প্রশ্নে মতামত নেওয়ার পাশাপাশি সংলাপও করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে ছয়টি দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকও করেছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ রয়েছে মধ্য জুলাই পর্যন্ত। ইতোমধ্যে আমরা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি, প্রাথমিক আলোচনা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে।”
তিনি বলেন, দলগুলোর প্রস্তাব পযালোচনা করে পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু হবে।
প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কাররের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।
কমিশনগুলোর সুপারিশ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট মতামত চায় ঐকমত্য কমিশন।
সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সংস্কারের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করে ঐকমত্য কমিশন।
ইতোমধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন।
শনিবার বাংলাদেশ জাসদ এবং জাকের পার্টির সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে৷
রাষ্ট্রের নাম বদল ও শরিয়াহ আইন চায় ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ করার প্রস্তাব দিয়েছে। সেই সঙ্গে শরিয়াহ আইন প্রণয়নেরও প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
ইসলামী আন্দোলন বলেছে, ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার স্প্রেডশিটে থাকা ১৮২টি সুপারিশের মধ্যে ১৪৫টিতে একমত, ২৬টি দ্বিমত ও বাকিগুলোতে মন্তব্যসহ আংশিক মত জানানো হয়েছে। এছাড়া ৪১টি নতুন ও আনুপাতিক ভোট পদ্ধতিসহ চারটি ‘মৌলিক’ প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের কাছে মতামত হস্তান্তর করেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহম্মেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন৷
পরে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে সুশাসন, দুর্নীতি, ন্যায় বিচার, উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চারটি মৌলিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।”
ইসলামী আন্দোলনের ‘মৌলিক’ চার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, আত্মশুদ্ধি, জবাবদিহিতা, শরিয়াহ আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা চালু।
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, “রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের সুপারিশের সঙ্গে আমরা একমত।”
দলটির প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের নামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নাম আমরা বলছি পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ। একটা জনকল্যাণ রাষ্ট্র। কারণ হল, জনকল্যাণ নামটা দেখার সাথে সাথে অকল্যাণমূলক চিন্তা যেন মানুষের মুখে না আসে, এ জন্য এই নামটা আমরা প্রস্তাব করেছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস অব্যাহত রয়েছে দাবি করে এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, “অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার এসব বন্ধ করতে পারেনি।
“সরকার যাতে ভক্ষক না হয়ে রক্ষকে পরিণত হয়; ধর্ষণ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান হয়-সেজন্য সর্বজনীন শরিয়াহ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।”
ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ও সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম।