“আমরা স্বীকার করেছি যে, কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে, সেগুলো আমাদের দূর করতে হবে এবং দুইপক্ষ একমত যে এগুলো দূর করতে হবে।
Published : 20 Feb 2025, 08:11 PM
ওমানের মাসকাটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে দুদেশের উদ্বেগ দূর করার বিষয়ে সাধারণ আলোচনা হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আলাপ না হওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “ওটা নিয়ে নির্দিষ্ট করে আলোচনা হয়নি। আমরা ইন জেনারেল সবগুলো নিয়ে কথা বলেছি।”
হাসিনার প্রত্যর্পণকে ‘পাশে সরিয়ে রেখে’ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আরেক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সরিয়ে রাখারও ব্যাপার না। এটা স্বতন্ত্র একটা ইস্যু যে, কোর্ট চেয়েছে তাকে, আমরা অনুরোধ করেছি তাকে প্রত্যর্পণের জন্য, করেনি। তার মানে এই নয় যে আমরা বাকি সবকিছু নিয়ে বসে থাকব।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে দায়িত্বে আসে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনো আত্মগোপনে।
এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনও কোনো জবাব দেয়নি।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। দিল্লিতে বসে তিনি বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন বলে অভিযোগ এনেছে ইউনূস সরকার।
পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ভারত সরকার।
বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে কূটনীতিক তলবের পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটেছে।
এর মধ্যে গত রোববার ওমানের মাসকাটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই প্রতিবেশী দেশ যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, ওই বৈঠকে তা স্বীকার করেছে উভয়পক্ষ। সেগুলো নিরসনে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে জয়শঙ্কর তার এক্স হ্যান্ডেলে তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল আলোচনার কেন্দ্রে, বিমসটেক নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
টানাপোড়েন সরিয়ে ‘ভালো কর্মসম্পর্ক’ গড়ে তোলার বিষয়ে দুদেশের দুই শীর্ষ কূটনীতিক এক হওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, “শুরুতে তো যে টানাপোড়ন ছিল সেটা সবাই জানে। আমরা স্বীকারও করেছিলাম। পররাষ্ট্র সচিবরা দেখা করেছে। ব্যবসা মোটামুটি পিকআপ করেছে। দেখা গেছে যে, আগের লেভেলে পৌঁছে গেছে, এগুলোতো প্রতিটি ইন্ডিকেশন।
“কিছু টানাপড়ন এখনো রয়ে গেছে, যেমন-ভিসাসহ কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু দুই পক্ষই আমরা মোটামুটি এ ব্যাপারে একমত হয়েছি যে, এগুলো সব দূর করে একটা গুড ওয়ার্কিং রিলেশনে আমাদের পৌঁছাতে হবে। সেজন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এগোবেন, আমরাও এগোব।”
কী কী উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট করে বলিনি এই উদ্বেগ আছে। আমরা স্বীকার করেছি যে, কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে, সেগুলো আমাদের দূর করতে হবে এবং দুইপক্ষ একমত যে এগুলো দূর করতে হবে। সম্পর্কটা যাতে উন্নত হয় সেটা দেখতে হবে।”
ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের ধারাবাহিকতায় এস জয়শঙ্করকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “আমি তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমাদের তো পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে, মন্ত্রী পর্যায়েও কিন্তু আমাদের একটা মেকানিজম আছে।
“আমি তাকে বলেছি, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতবার আপনাদের দেশে গিয়েছেন, এখন আপনার আসার কথা ঢাকায়। কোনো সুবিধাজনক সময়ে যদি আপনি আসেন, সময় জানালে আমরা ব্যবস্থা করব।”
আমন্ত্রণের বিষয়ে জয়শঙ্করের প্রতিউত্তর কী ছিল, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “তিনি ইতিবাচক ছিলেন।”