উপ সচিব মোহাম্মদ আবদুল ছালাম বলছেন, কাকরাইল মসজিদের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার হয়নি।
Published : 30 Dec 2024, 01:15 PM
ঢাকার কাকরাইল মসজিদে দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের তাবলিগ জামাতের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ জারির চার দিনের মাথায় বিবাদমান দুই পক্ষের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একে আদেশে বলা হয়েছে, “মাওলানা জুবায়ের আহমেদ ও মাওলানা সাদ এর অনুসারীগণ পূর্ব হতে জেলা-উপজেলায় যে সকল মসজিদে নিজ নিজ তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিবাদমান পক্ষদয় সংশ্লিষ্ট মসজিদে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।"
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের উপ সচিব মোহাম্মদ আবদুল ছালাম স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বিষয় হিসেবে লেখা হয়েছে– “তাবলিগ জামাতের কাকরাইল মসজিদে শবগুজারি (রাত্রিযাপন) কার্যক্রম পরিচালনা ও শন্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।”
তবে আদেশের ভেতরে কাকরাইল মসজিদের বিষয়ে আলাদা করে কিছু বলা হয়নি।
নতুন এই নির্দেশনা দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে এবং কাকরাইলের ক্ষেত্রে আদেশ প্রত্যাহার করা হল কি না জানতে চাইলে উপ সচিব মোহাম্মদ আবদুল ছালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তার সবই বলবৎ আছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে কোথাও কোথাও সমস্যার খবর আসছে, সে কারণে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
নতুন নির্দেশনার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “জেলা, উপজেলায় যে মসজিদে যে পক্ষ তাবলিগের কাজ করে আসছিলেন, তারা যেন সেই মসজিদেই তৎপরতা সীমাবদ্ধ রাখেন এবং সব পক্ষ যেন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখেন, সেটাই বলা হয়েছে নতুন আদেশে।”
এর আগে এক আদেশে সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে রাত্রীযাপনসহ তাবলিগ জামাতের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় সরকার।
আর বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের কেবল ২৭ ডিসেম্বর কাকরাইল মসজিদ ঘিরে বড় ধরনের জমায়েত থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের রূপ পাওয়ার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৬ ডিসেম্বর ওই আদেশ দেয়।
তুরাগ তীরে ইজতেমার মাঠ দখল ঘিরে গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে তাবলিগ জামাতের দুইপক্ষের সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানির পর থেকে উত্তেজনা চলছে।
এর মধ্যে দুই সপ্তাহের জন্য কাকরাইল মসজিদে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর থেকে ঢাকায় তাবলিগ জামায়াতের প্রধান এ মারকাজে (কেন্দ্রে) জড়ো হয়েছিলেন সাদপন্থিরা।
অন্যদিকে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে ২৬ ডিসেম্বর সকাল থেকে কাকরাইল এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন জুবায়েরপন্থিরা।
একইসঙ্গে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ এবং তাবলিগের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে না দেওয়ারও ঘোষণা দেন তারা।
জুবায়েরপন্থিদের দাবি, সাদপন্থিদের সকল কার্যক্রম রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে; টঙ্গীতে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে; কাকরাইল মারকাজ ও টঙ্গীর ইজতেমা মাঠসহ তাবলিগের সকল কার্যক্রম ‘শুরায়ে নিজামের’ অধীনে করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
ওই প্রেক্ষাপটে কাকরাইল মসজিদে কার্যক্রম চালানো নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।
তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে বিভাজন শুরু হয় ২০১৭ সালে। নামাজ ও কোরআন পড়িয়ে টাকা নেওয়ার সমালোচনা করে সেসময় মাওলানা সাদের একটি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে তাবলিগ অনুসারীদের মধ্যে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ে। এবার সেই বিভেদ আরও বড় হয়েছে। সেই তাদের বিরোধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বে।
গত ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে ইজতেমা মাঠ দখল ঘিরে সংঘর্ষে জড়ায় দুইপক্ষ। এতে তিনজনের প্রাণহানি হলে একে অপরের ওপর দোষ চাপান সাদ ও জুবায়েরপন্থিরা।
পুরনো খবর
কাকরাইলে তাবলিগী কার্যক্রমে সাদপন্থিদের বিরত থাকার নির্দেশ
কাকরাইল মসজিদে '২ সপ্তাহর অবস্থানে' সাদপন্থিরা
সাদপন্থিদের নিষিদ্ধের দাবিতে কাকরাইলে অবস্থানের ডাক