সাদপন্থিরা একতরফা আক্রমণ করেছে, দাবি হেফাজতের আমির ও মহাসচিবের।
Published : 20 Dec 2024, 07:56 PM
বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ কান্দলভীর অনুসারীদেরকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ তীরে সংঘাতে প্রাণহানির পুরো দায় সাদপন্থিদের ওপর দিয়ে সংগঠনটি দাবি করেছে, সংবাদ মাধ্যম ‘একতরফা সন্ত্রাসী হামলা‘কে ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষ’ হিসেবে দেখিয়ে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ করেছে।
শুক্রবার হেফাজতের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
এতে বলা হয়, “টঙ্গী ইজতেমার ময়দানে যখন আমাদের তাবলিগের সাথী ভাইরা গভীর রাতে তাহাজ্জুদ পড়ছিলেন এবং তাদের অনেকেই ঘুমন্ত ছিলেন, ঠিক তখনই চিহ্নিত ‘আওয়ামী দোসর সাদপন্থিরা’ পরিকল্পিতভাবে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৪ জনকে শহীদ করেছে এবং অসংখ্য সাথী ভাইকে আহত করেছে।”
হামলায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে হেফাজত নেতারা বলেন, “একইসাথে তাদের ‘আওয়ামী ও ভারতীয় ষড়যন্ত্রমূলক নেটওয়ার্ক’ ধ্বংস করে, তাদের সমস্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “একপক্ষীয় হামলার এ ঘটনাকে ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষ’ হিসেবে অপপ্রচার চালিয়েছে ‘ভারতের এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত একদল মিডিয়া’। এমন নির্লজ্জ হলুদ সাংবাদিকতার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
“নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা অনুযায়ী কোনো ঘটনাকে ‘সংঘর্ষ’ আর কোনো ঘটনাকে ‘হামলা’ বা ‘তাণ্ডব’ বলা কোনোভাবেই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার উদাহরণ নয়। তাদের অন্তত লজ্জা হওয়া উচিত।”
টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে মামলা হয়েছে।
নামাজ ও কোরআন পড়িয়ে টাকা নেওয়ার সমালোচনা করে ২০১৭ সালে মাওলানা সাদের একটি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে তাবলিগ অনুসারীদের মধ্যে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়ে। এবার সেই বিভেদ আরও বড় হয়েছে।
জোড় ইজতেমা পালন করা নিয়ে বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে জড়ায় দুইপক্ষ। এতে তিনজন নিহত হওয়ার কথা সকালেই জানান গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল করিম খান।
পরে বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীদের অন্যতম নেতা মামুনুল হক বলেন, এই সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছেন চারজন।
হেফাজত নেতারা বিবৃতিতে বলেন, “বিতর্কিত ভারতীয় আলেম মাওলানা সাদের অনুসারী দাবি করে তাবলিগে বিভাজনের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে দ্বীনের মুখোশধারী একদল চিহ্নিত ‘আওয়ামী দোসর’।”
তাবলিগে বিভাজন তৈরির জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে এতে বলা হয়, “সাদপন্থিরা ‘আওয়ামী লীগের তাঁবেদারি করে’ শুধু তাবলিগে বিভাজনই নয়, আলেম-ওলামার বিরুদ্ধেও বিদ্বেষমূলক প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে।
“বিগত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও তারা ইজতেমা ময়দানে দিনের আলোতে লোহার গেট ভেঙে নিরীহ আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসাছাত্রদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে নৃশংস হামলা চালায়, যার ভিডিও প্রমাণ এখনও রয়েছে। তখনো ১ জন নিহতসহ আহত হন অজস্র সাথী ভাই।”
আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ হওয়ায় তখন তাদের বিচার করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে হেফাজতের আমির ও মহাসচিব বলেন, “তখন থেকে উম্মাহর ঐক্য বিনষ্টকারী এই সন্ত্রাসী সাদপন্থিদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ শুরু হলেও ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের কারণে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।”
অন্তর্বর্তী সরকার সাদপন্থি ‘সন্ত্রাসীদের’ সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে টঙ্গীর ময়দানে হত্যায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে বলেও আশা করছেন হেফাজত নেতারা।
টঙ্গীতে সংঘর্ষ: নিহতের সংখ্যা আসলে কত?
ফাঁকা ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে
সাদপন্থিদের ইজতেমা করার সুযোগ নেই: মামুনুল