বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ দিতে হটলাইন নম্বর ১৬১০৬ এ কল করার পরামর্শ মেয়র আতিকুল ইসলামের।
Published : 17 Jun 2024, 05:28 PM
পশু কোরবানি শেষে ঢাকা শহরকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ২টা থেকে ঢাকার দুই সিটির ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বর্জ্য অপসারণের কাজে নেমে পড়েছে দুই সিটি করপোরেশন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের ও উত্তর সিটি জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, বর্জ্য অপসারণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কর্মী নিয়োজিত করার পাশাপাশি ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে দুই করপোরেশনই।
সোমবার সকালে রাজধানীতে ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানির তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বেশিরভাগ জায়গায় বাড়ির সামনে ফাঁকা রাস্তা বা ফুটপাতকেই বেছে নেওয়া হয় কোরবানির জন্য। মাংস কাটাকাটি চলে বাজির বেইজমেন্টে।
দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস গেল সপ্তাহে পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন দুপুর ২টা থেকে এই কাজ শুরু হবে। আর উত্তরের মেয়র এই কাজটি একদিনের বদলে ৬ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করার কথা বলেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম দুপুর ২টায় মিরপুরের প্যারিস রোড এলাকায় থেকে উত্তর সিটির বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, “আমরা ৩ নম্বরের ওয়ার্ডে একটি নির্দিষ্ট স্থানে এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির উদ্যোগ নিয়েছি, এখানে ১২০০ পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সবাই একসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দিলে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমটা অনেক সহজ হয়।"
একসঙ্গে এতগুলো স্থানে পশু কোরবানি দেওয়ায় পরিচ্ছন্নতার কাজটা দ্রুত শুরু করাও সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
“যে ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট স্থানে বেশি সংখ্যক পশু কোরবানি দিবে সেই ওয়ার্ডে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। রাত ৮টার মধ্যে নির্ধারিত ৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্য ডিএনসিসির ১০ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করছেন। সব কাউন্সিলর এবং ডিএনসিসির সকল কর্মকর্তা মাঠে রয়েছে। আমি নিজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিদর্শন করব।"
ঈদের প্রথম দিনই পশু কোরবানির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি আজকের মধ্যে নিতান্তই সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই আগামীকাল সকালের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করুন তাহলে দ্রুত শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে পারব।"
বর্জ্য অপসারণ কাজে সহযোগিতা জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান আতিক।
এছাড়া ১৬১০৬ হট লাইন নম্বরে বর্জ্য সরানোর বিষয়ে তথ্য জানানোর পরামর্শ দেন।
“ ফোন করে কোনো তথ্য জানালে কন্ট্রোল রুম থেকে ব্যবস্থা নেবে”, বলেন আতিক।
তিনি বলেন, “ এখন অনেক গরম, আবার বৃষ্টিও হচ্ছে। এই সময়ে এইডিসের লার্ভা জন্মায়। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অনেকে আজকে কালকেও বাড়িতে যাবেন। বাড়ি যাওয়ার আগে বাসা বাড়ির ছাদ, বারান্দা, বাথরুম এগুলো পরিষ্কার করে যাবেন। কোথাও পানি জমে এইডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে, এমন পাত্র উল্টিয়ে রাখবেন।"
এরপর উত্তরে বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন শুরু করেন মেয়র।
দুপুরের পর পর রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, শান্তিনগর, মৌচাক এলাকা ঘুরে বিভিন্ন সড়কে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের রক্ত ধুতে দেখা গেছে।
বড় সড়ক ছাড়াও অলিগলি থেকে পশুর গোবর, জবাই কাজে ব্যবহৃত পাটি, হাটের খড়কুটো, হাড়, ঘাসপাতা ও অন্যান্য বর্জ্য ছোট ছোট ভ্যানে করে সরিয়ে বড় কোনো জায়গায় রাখতে দেখা যায় কর্মীদের। সেখান থেকে সেসব বর্জ্য সিটি করপোরেশনের ট্রাকে তোলা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আভাস ছিল ঈদের দিন ঢাকার যে কোনো সময়ে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললেও বৃষ্টি হয়নি।
মালিবাগে সড়কে কাজ করা পরিচ্ছন্নতা কর্মী রোকেয়া বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম বৃষ্টি হবে, কিন্তু কপাল মন্দ। এখন কষ্টটা একটু বেশি করতে হচ্ছে। অলিগলি থেকে ছোট ভ্যানে করে আমরা ময়লা নিয়ে আসছি মোড়ে।”
আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী কবির বলেন, “আমিসহ ১০ জন গুলবাগ, শান্তিবাগের থেকে ভ্যানে করে এসব ময়লা এনে মালিবাগ মোড়ে নিয়ে আসছি। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ”
দুই সিটির যত ব্যবস্থাপনা
ঢাকায় কোরবানি করা পশু এবং কোরবানির হাট মিলিয়ে অন্তত ৩৯ হাজার টন বর্জ্য হবে বলে ধরে নিয়েছে দুই সিটি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ১১৫টি ডাম্প ট্রাক, ১৪০টি পিক-আপ, ১২৯টি কমপেক্টরসহ ৫২০টি বিশেষায়িত যান প্রস্তুত করেছে।
২৮টি ওয়ার্ডে ডিএনসিসির নিজস্ব ২ হাজার ৩৯৪ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৩২৩ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী, ৪ হাজার ২০০ জন ভ্যান সার্ভিস কর্মী এবং ৪২০ জন মিলিয়ে ৯ হাজার ৩৩৭ জন কর্মী এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ডিএনসিসি কোরবানির পশুর বর্জ্য রাখার জন্য ৯ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ, এক লাখ বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ, ৬৭ হাজার কেজি ব্লিচিং পাউডার নগরবাসীকে সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া সড়ক জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হবে সাড়ে চার হাজার লিটার স্যাভলন।
বর্জ্য অপসারণে ৪ হাজার ৯৯৭ জন নিজস্ব ও সাড়ে চার হাজার বেসরকারি কর্মী কাজ করবে বলে জানিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবেন ৬০ জন করে।
বর্জ্য অপসারণে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ১৫০টি মিনি ট্রাক, ৪৬টি কম্পেক্টর এবং ৪৭টি পে লোডারসহ ৫৬০টি যান নিয়োজিত থাকবে।
ডিএসসিসি এলাকার ১১টি হাটের প্রতিটিতে ৭০ জন করে পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করছেন। এছাড়া হাটের বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে ৫৭টি ডাম্প ট্রাক, ১২টি পে লোডার এবং ১১টি টায়ার লোডার।
সড়কের বর্জ্য অপসারণের পর জীবাণুমুক্ত করতে ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার, ১ হাজার ১১০ লিটার স্যাভলন ব্যবহার করবে ডিএসসিসি।
কোরবানির পশুর বর্জ্য রাখার জন্য ৯ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ এবং ১ লাখ বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ নগরবাসীকে বিনামূল্যে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয় দক্ষিণ সিটি।