যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিআইডিএস স্বাধীনভাবে কাজ করবে বলে ‘সমালোচকদের’ আশ্বস্ত করেছেন মন্ত্রী এম এ মান্নান।
Published : 04 Oct 2022, 01:42 AM
পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা জনশুমারির ‘সত্যতা’ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) স্বাধীনভাবে যাচাই করবে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, এ ক্ষেত্রে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না।
সোমবার বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে শুমারি পরবর্তী যাচাই (পিইসি) জরিপের তথ্যসংগ্রহকারী, সুপারভাইজার ও সুপারভাইজিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমি চাই বিআইডিএস যেন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে এই কাজটা করে। সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আগেও আপনার ছিল। এটাকে চূড়ান্ত মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা আছে।
“জনশুমারির চূড়ান্ত ফলাফলে বিআইডিএস সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং তাদের উপর কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না।”
এই যাচাই জরিপের পরই চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ২৭ জুলাই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ষষ্ট জনশুমারির প্রতিবেদনে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার বলে জানানো হয়। এর মধ্যে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা এক কোটি ২ লাখেরও কম।
জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বিবিএসের ওপর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ’দেশের মানুষ কম’ দেখানো হয়েছে বলে সমালোচনা ওঠেছিল। ওই প্রসঙ্গেই মন্ত্রীর এ বক্তব্য এল।
মান্নান বলেন, “জরিপ পরিচালনা কার্যক্রম নিয়ে বিবিএস সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন ছিল। এটাকে চূড়ান্ত মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা আমাদের আছে। আমি একজন এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমিও চাই তারা যেন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। কোনোভাবে যেন কোনো মহল থেকে কিছু না আসে।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সম্প্রতি ষষ্ট জনশুমারির প্রাথমিক যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তা চূড়ান্ত করবে বিআইডিএস। আগামী ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর ৩৫৪টি নমুনা এলাকায় গণনা যাচাই করবে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
জনশুমারি: গ্রামে সাড়ে ১১ কোটি, শহরে ৫ কোটি
ঢাকা নগরীর জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “আমি এই মন্ত্রণালয়ের কোচ হিসেবে বলছি, বিআইডিএসকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়া হবে। বিআইডিএস সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে তাদের কাজে কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করা হবে না।”
পরিসংখ্যান নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন তোলার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এটা নিরেট সংখ্যা। চ্যালেঞ্জ করার সরাসরি কোনো পথ নেই। তখন তারা তাদের মনোজগতে প্রবেশ করেন… আর বইলেন না এগুলো এই জন্য হচ্ছে এসব বলেন।
“মূল বিষয় হলো তারা (সমালোচনাকারীরা) তাদের নিজস্ব কৌশলগত অবস্থান থেকে এটা করে।”
যারা কাজ করেন তাদের প্রতি অনাস্থা বা অবিশ্বাস করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
“এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। আমরা আমাদের কাজটা করে যাব।”
বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভারতের পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান যতটা স্বাধীনতা ভোগ করে, বিবিএসকে ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে আপত্তি অনেক কমে যাবে।
“প্রযুক্তির উৎকর্ষতার মাধ্যমে বিবিএস অনেক শক্তিশালী হয়েছে। বিবিএস- এর জরিপের তথ্য নিয়ে এখন বিআইডিএস যাচাই ও গবেষণা করবে। এখান থেকে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।”
সভাপতির বক্তব্যে বিনায়ক সেন বলেন, “আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছি। তার অর্থ হচ্ছে আমাদের আর্থ-সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। তাই এই উন্নয়নের সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতাও বাড়ানো উচিৎ।”
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর মাধ্যমে ১৫ থেকে ২১ জুন দেশের প্রতিটি বাসগৃহ, খানা (হাউজহোল্ড) ও ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়।
এবারের শুমারিতে ডিজিটাল ডিভাইস ‘ট্যাবলেট’ ব্যবহার করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউয়িং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার কর্মী তথ্য সংগ্রহে কাজ করে।
শুমারি পরবর্তী যাচাই হল প্রতিনিধিত্বকারী নমুনার পূর্ণ-গণনা যেখানে মূল শুমারি সময়ে সংগৃহীত তথ্যের সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য তুলনা করা হবে।