এম এ কাশেমের জামিন স্থগিত করে ২১ নভেম্বর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।
Published : 13 Nov 2022, 10:23 PM
অর্থ আত্মসাতের মামলায় বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রাস্টি এম এ কাশেমকে দেওয়া হাই কোর্টের জামিন স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
জামিন স্থগিত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের শুনানি শেষে রোববার এ আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
এম এ কাশেমের জামিন স্থগিত করে দুদকের আবেদনটি আগামী ২১ নভেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছে আদালত। তবে আরেক সাবেক ট্রাস্ট্রি রেহানা রহমানের জামিন বহাল রেখেছেন চেম্বার জজ।
দুদকের দায়ের করা মামলায় গত ২২ মে আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে ওই দুইজনসহ চারজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
এর পরদিন তাদের নিম্ন আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর থেকে তারা কারাগারে আছেন। পরে বিচারিক আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হলে হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন তারা।
সে আবেদনের শুনানির পর আদালত তাদের জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে; কেন তাদের জামিন দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় তাতে। সে রুলটি নিষ্পত্তি করে গত ১০ নভেম্বর দেশের বাইরে এবং অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবেন না, এমন শর্তে তাদের জামিন দেয় আদালত।
রোববার সকালে তাদের সে জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে দুদক। এরপর দুপুরে আবেদনের শুনানির পর রেহানা রহমানের জামিন বহাল রেখে এম এ কাশেমের জামিন স্থগিত করে আদালত।
আদালতে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক দুই ট্রাস্টির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুরাদ রেজা, শাহ মঞ্জুরুল হক ও সাঈদ আহমেদ রাজা।
আইনজীবী রাজা সাংবাদিকদের বলেন, “রেহানা রহমানের জামিন স্থগিতের আবেদনের বিষয়ে আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছে, এর অর্থ হাই কোর্টের জামিন বহাল রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় তিনি মুক্তি পাবেন।”
তবে এম এ কাশেমের জামিন স্থগিত করে ২১ নভেম্বর শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়েছে বলে জানান তিনি।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “রেহানা রহমানের জামিন চেম্বার আদালতে স্থগিত না হওয়ায় এখন হাই কোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হবে।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত ৫ মে ছয় মামলা করে দুদক।
এতে আসামি করা হয়- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের তত্কালীন চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
এরপর গত ২১ অক্টোবর ছয় আসামির সঙ্গে আরও তিনজনকে যুক্ত করে ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক। এই তিন আসামি হলেন- আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, পরিচালক আনোয়ারা বেগম ও সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের জন্য কম দামে জমি কিনলেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতাকে টাকা দেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোক দিয়ে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করেন। পরে এফডিআর ভেঙে টাকা আত্মসাৎ করেন। এই প্রক্রিয়ায় টাকা আত্মসাত করে তারা অর্থ পাচারের অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।