তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে তাজুল বলেন, “আমাদের তদন্ত সংস্থা দিনরাত কাজ করছে। আমরা তদন্তের একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।”
Published : 18 Feb 2025, 04:47 PM
আগামী মার্চে তদন্ত কাজ শেষ হলে তার পরের মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার শুরু করা যাবে বলে মনে করেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বৈষম্যবিরোধী অপরাধের মামলায় মঙ্গলবার সাবেক মন্ত্রীসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর তিনি তদন্ত নিয়ে কথা বলেন।
সকালে তাদের হাজির করার পর প্রসিকিউশন সময়ের আবেদন করে এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।
আগামী ২০ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে তাজুল বলেন, “আমাদের তদন্ত সংস্থা দিনরাত কাজ করছে। আমরা তদন্তের একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।
“আশা করছি খুব সহসা এ রিপোর্টগুলো আমাদের হাতে চলে আসবে। বাকি যে মামলাগুলো তাদের বেলায়ও একই একই এভিডেন্স কাজ করবে। সেই হিসাবে আমরা তাদের জন্যও একই আবেদন জানিয়েছিলাম। আদালত মঞ্জুর করেছেন।”
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা গণশুনানি করছেন, সেখানে শত শত ভিক্টিম আসছেন এবং তাদের মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ফার্স্ট হ্যান্ড রিপোর্টগুলো তদন্তকারীদের দিয়েছেন বলে তাজুল জানান।
গণশুনানিতে পাওয়া তথ্য-প্রমাণগুলো গোছানোর জন্য একটা সময়ের প্রয়োজন হবে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, “একটা হত্যাকাণ্ড হলে সহসা রিপোর্ট দেওয়া যায়। এটা অসম্ভব জটিল এবং কঠিন কাজ। এ জন্য আমরা দিনরাত কাজ করছি। আশ করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে সক্ষম হব।”
রিপোর্ট বর্তমানে যে পর্যায়ে আছে সে অনুযায়ী আগামী মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারার আশা প্রকাশ করে তাজুল বলেন, “এটা কিন্তু কোনো ফাইনাল টাইমলাইন নয়। তদন্তের জন্য যত টাইম লাগবে আমরা তা গ্রহণ করব। আমরা যদি তাড়াহুড়া করি তাহলে এত কমপ্লেক্স একটা তদন্তে যাদি কোনো ত্রুটি থাকে এবং সে ত্রুটির ফাঁক দিয়ে আসামিরা বেরিয়ে যায় তাহলে জাতির কাছে আমরা দায়বদ্ধ থাকব।”
ত্রুটিহীনভাবে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করতে সময়টা নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি লেন, “মার্চ মাসের মধ্যে যদি তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে যাই সেক্ষেত্রে এপ্রিলের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক পর্বটা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
জাসিংঘের কাছ থেকে তাদের রিপোর্টটি চাওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় নিহত বা আহতদের শরীর থেকে যেসব বুলেট অপসারণ করা হয়েছে সেগুলো বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে জব্দ করা হয়েছে এবং ফরেনসিক করার কাজ চলমান আছে।
আন্দোলনের সময় কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে সে ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তথ্য ও জাসিংঘের তদন্তের তথ্যে মিল আছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান কৌঁসুলি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে প্রবল গণআন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ অগাস্ট দেশ ছাড়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে থাকছেন।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
শেখ হাসিনার তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ
এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।
প্রায় তিনশ মামলায় শেখ হাসিনার বিচার চলার মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে কূটনৈতিকপত্র (নোট ভারবাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার।
ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব বাংলাদেশকে দেয়নি। বরং ভারতে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর খবর এসেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে।
এর মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর অবস্থানে আছে ভারত সরকার। ঢাকার চিঠির জবাব দিতে দিল্লি কয়েক মাস সময় নিতে পারে, এমন কথাও বলা হয় এসব প্রতিবেদনে।
হাজি সেলিমের ছেলেকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ
সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে সোলাইমান সেলিমকে শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীসহ ৪৬ জনের সঙ্গে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশও দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
তার বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, “সোলাইমান সেলিমের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল; তিনি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে থাকার কারণে এ তথ্য আসার পরে আমরা তাকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলাম। প্রোডাকশন ওয়ারেন্টমূলে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছিলাম, আদালত মঞ্জুর করেছেন।”