দিল্লি সফরের প্রথম দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আবাসস্থলে দেখা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল।
Published : 22 Jun 2024, 02:04 AM
বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পথে চ্যালেঞ্জগুলো সংলাপের মাধ্যমে দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দ্বিপাক্ষিক সফরের প্রথম দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলো অনুভব করছি সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি।”
তোফাজ্জল জানান, দুই দেশে নতুন সরকার গঠনের পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিতে আলোচনা করেছে দুই পক্ষ।
মুখ্য সচিব বলেন, “দুটি নতুন সরকার (ভারত ও বাংলাদেশে) ক্ষমতায় এসেছে ম্যান্ডেট নিয়ে (জনগণের) । সুতরাং, দুই দেশের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে।”
জয়শঙ্কর বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে, এই সম্পর্ককে এখন নতুন অধ্যায়ে নেওয়া যেতে পারে।
“এবং এটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে করা হবে,” ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে লজিস্টিকস, জ্বালানি ও কানেকটিভিটি খাতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়।
আগামী ২৩শে জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর পূর্তিতে দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) জন্য একটি নতুন ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান জয়শঙ্কর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে বিমসটেকের পরবর্তী বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন শেখ হাসিনা।
বিমসটেক শক্তিশালী হলে তা অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কানেকটিভিটি এবং ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে বলেও বৈঠকে একমত হন দুই নেতা।
মুখ্য সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার বাইরেও যাবার কথা বলেছেন। তার মানে আমাদের একই সঙ্গে কাজ করার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকেও তাকাতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর ও রাজস্ব সংগ্রহ এবং জনগণকে সেবা প্রদান উন্নয়ন করাসহ ডিজিটাল কর্মসূচির উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের প্রকল্প দ্রুত ও সহজে শেষ করার ওপর জোর দেন এবং এ বিষয়ে উভয়েই একমত হন।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, মিয়ানমার সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, প্রয়োজনে বিমসটেকে মিয়ানমারকে বাদ দিয়ে অন্যান্য সদস্যদেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। কারণ, মিয়ানমারের কারণে ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তিনি তাদেরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) এর সদস্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন।
শেখ হাসিনা তাদের বলেন, “আপনারা (ভারতীয় ব্যবসায়ীরা) বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করুন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমরা আপনাদের স্বাগত জানাই।”
পরে সংবাদ সম্মেলনে সালমান এফ রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলতেন ‘প্রতিবেশী সবার আগে’ এবং তিনি বাংলাদেশের সব প্রতিবেশী দেশকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অগ্রাধিকার দেন।”
বাংলাদেশ যে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বলেন, তারা এটা ব্যবহার করতে পারেন এবং সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।
সালমান বলেন, বাংলাদেশে যারা ব্যবসা করছেন তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী।
সিইওরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তারা এফবিসিসিআই-এর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কাজ করতে চান। বিশেষ করে কৃষি, আইটি ও লজিস্টিকস সেক্টরে যৌথভাবে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
ভারতের বিশেষ করে আইটি খাতে তাদের সাফল্য তুলে ধরে ব্যবসা সম্প্রসারণে বাংলাদেশে সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে চান তারা।
সিইও-রা নন-ট্যারিফ বাধা সম্পর্কেও কিছু বিষয় উত্থাপন করলে সালমান বলেন যে তাদের (সিআইআই) এই প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য তাদের (ভারত) সরকারকে বলতে বলা হয়েছিল।
অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমদ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীসহ কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বৈঠকে অংশ নেন।
আইটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পুরী, সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপারসন শোবানা কামিনেনি, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত মাধব বৈদ্য, ডাবর ইন্ডিয়া লিমিটেডের সিইও মোহিত মালহোত্রা, অমৃত সিমেন্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার বাগলা, আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সিইও (এনার্জি) দীপক অমিতাভ, সাংখ্য ল্যাবসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সিওও বিশ্বকুমার কয়ারগাড্ডে, সিটিও এবং তেজস নেটওয়ার্কস লিমিটেডের (টাটা গ্রুপ কোম্পানি) প্রতিষ্ঠাতা কুমার শিবরাজন, সিআইআইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মারুত সেন গুপ্তও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।