“বিষয়টা আপনারা সরকারকে জিজ্ঞেস করুন। সরকার আমাদের কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে”, বলেন তিনি।
Published : 16 Nov 2024, 09:16 PM
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে দেশের প্রাচীনতম ও অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলোর মতামত নেবেন কি না, সে প্রশ্নে এ বিষয়ক কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার তুলেছেন ‘সরকারের অভিপ্রায়ের’ কথা।
শনিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বদিউল। এ সময় তিনি এই প্রশ্নের মুখোমুখি হন।
জবাবে তিনি বলেন, “এই বিষয়টা আপনারা সরকারকে জিজ্ঞেস করুন। সরকার আমাদের কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছে, প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাই অবশ্যই সরকারের অভিপ্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
গণআন্দালনের মুখে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যান। সেই দিন থেকে দলটির নেতারা প্রায় সবাই আত্মগোপনে, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে।
সরকার পতনের দিনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা উপজেলা পর্যায়েও বহু কার্যালয় হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এরপর থেকে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম কার্যত বন্ধ।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ‘ফ্যাসিবাদ’ কায়েম করেছে, এমন অভিযোগ তুলে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে দলটিকে আন্দোলনে প্রাণহানি ও অতীতে ‘গুম-খুনের’ বিচার না হওয়ার পর্যন্ত রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
সংবিধান সংস্কার বিষয়ে কমিশন এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীদের কোনো মতামত নেবে না।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামত চাইলেও স্পষ্টত তারাও আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের এড়িয়ে চলছে।
গত সোমবার আনুষ্ঠানিক মতামত ও প্রস্তাব চেয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ ২২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আওয়ামী লীগসহ বাকি ২৬টি দলকে এই চিঠি দেওয়া হয়নি।
তবে বদিউল বলেন, “আমরা সব মত পথের প্রেক্ষিতে সংস্কার করার চেষ্টা করছি। প্রত্যেকেরই মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে, সুযোগ পাবে।”
কমিশনের নিজস্ব কোনো এজেন্ডা নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা কারো পক্ষে নেই। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার। আমরা চেষ্টা করছি যাতে একগুচ্ছ প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারি, যার মাধ্যমে ভোটটা মানুষের কল্যাণমুখী হয় এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হয়।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে দশম ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সে সময় বদিউল সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মত দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না।”
অতীতের নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম, অন্যায় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেগুলো দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ করার চেষ্টা করা হবে।”
নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে এক প্রশ্নে বদিউল বলেন, “সেজন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের দরকার রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
রাজনীতি এখন ‘ব্যবসায়’ পরিণত হয়েছে বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, “টাকা দিয়ে মনোনয়ন কেনে, টাকা দিয়ে ভোট কেনে। এখন আর জনকল্যাণমূলক রাজনীতি নেই। এটা কীভাবে বন্ধ করা যায়?”
আরও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ ছাড়াও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে: বদিউল আলম
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার: দল ও জোটের কাছে প্রস্তাব চেয়ে কমিশনের চিঠি
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব কি ভালো হবে? আবু হেনা বললেন, 'না'