“নববর্ষের আয়োজনে মূর্তিসহ ইসলাম অসমর্থিত সকল কিছু বাদ দিন,” বলেন ফয়জুল করীম।
Published : 09 Apr 2025, 11:49 PM
পহেলা বৈশাখ উদযাপনে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে ও ধারণায়’ কিছু করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
তিনি বলেছেন, “নববর্ষের দিন মানুষ শালীনতা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সমর্থিত পন্থায় নানা আয়োজন করতেই পারে। কিন্তু সেই দিন কোনো যাত্রা করলে তাতে মঙ্গল হবে- এমন বিশ্বাস করলে বা ধারণা করলে পরিষ্কারভাবে তা গুনাহের দিকে নিয়ে যাবে।
“তাই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে কোনো কিছু অবশ্যই করা যাবে না। ‘মঙ্গল শব্দ ও ধারণা’ অবশ্যই বাদ দিতে হবে।”
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ফয়জুল করীম। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও তিনি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বলে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের মুসলিমদের স্বার্থেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইতিহাসের সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে নববর্ষের আয়োজন থেকে ‘মঙ্গল শব্দ ও ধারণা’ বাদ দিন। একইসঙ্গে নববর্ষের আয়োজনে মূর্তিসহ ইসলাম অসমর্থিত সকল কিছু বাদ দিন। বরং এ দেশের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে বিবেচনা করে ইসলাম সমর্থিত ধারণা ও উপকরণ ব্যবহার করুন।
“পতিত ফ্যাসিবাদের চাপিয়ে দেওয়া সাংস্কৃতিক লড়াই যদি অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে জারি থাকে, তাহলে ‘শহীদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি’ করা হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তা হতে দেবে না। তাই নববর্ষের সকল আয়োজন থেকে পতিত ফ্যাসিবাদের চাপিয়ে দেওয়া হিন্দুত্ববাদী প্রতীক, ধারণা ও অনুষঙ্গ বাদ দিতেই হবে।”
ফয়জুল করীম বলেন, “পহেলা বৈশাখ ঋতু সম্পর্কিত একটি বিষয়। এই অঞ্চলের মানুষের কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিয়ে-শাদিসহ অনেক কিছুই ঋতুর সঙ্গে সম্পর্কিত। সেজন্য বাদশাহ আকবর ইসলামী বর্ষপঞ্জিকাকে ভিত্তি ধরে সৌরবর্ষ গণনার জন্য বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন।
“এই সনের প্রবর্তনের সঙ্গে মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িত। একইসঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষ হাজার বছর ধরে মুসলমান হওয়ার কারণে তাদের আচার-প্রথা ও সংস্কৃতিতে ইসলাম বিরোধী কোনো কিছুর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কোনো আয়োজনে ইসলাম অসমর্থিত কিছু থাকা যাবে না।”
গত ২৩ মার্চ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন সংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেছিলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থাকবে, না কি তা পরিবর্তন করা হবে, তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে তার দেওয়া ব্ক্তব্যকে ‘মিস কোট’করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এর আগের দিন সোমবার মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আয়োজনটি নিয়ে বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি রয়েছে। সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত থেকেই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। নাম পরিবর্তনের কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
নববর্ষ ঘিরে নিরাপত্তা 'ঝুঁকি নেই': স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নাম নিয়ে এখনো সংশয়, 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' এবার কেমন হবে?
'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের