‘বাসে আগুন দিলেই পৌঁছে যেত টাকা’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, “একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে রকি। প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিত, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দিয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কারের অর্থ পাঠানো হত৷”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
Published : 6 Nov 2023, 10:44 AM
Updated : 6 Nov 2023, 10:44 AM

পাঁচদিন আগে রাজধানীর মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন পরিবহনের বাসে টাকার বিনিময়ে আগুন দেওয়া হয়েছিল। আর এই কাজের পেছনে রয়েছেন আমির হোসেন রকি নামের মহানগর ছাত্রদলের এক নেতা। 

মিণ্টু রোডে সোমবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রানসন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। 

ওই ঘটনার সময় হাতেনাতে আটক আলি আমিনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন,

আল আমিনের পর মিজানুর রহমান, আমির হোসেন রকি ও সাকিব নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর একদিন (২৯ অক্টোবর) হরতাল ও তিন দিন (৩১ অক্টোব থেকে ২ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। 

ওই অবরোধের দ্বিতীয় দিন বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে মুগদায় মিডলাইন পরিবহনের বাসে আগুন দেওয়া হয়। 

ওইদিন মুগদা থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেছিলেন, “যাত্রীবেশে উঠে মিডলাইন পরিবহনের বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাসে দুজন উঠেছিল, একজন যাত্রীদের সঙ্গে নেমে গেছে।” 

ওই সময় আল আমিনকে হাতেনাতে ধরা হয়। 

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন জানায়, তার নেতা মিজানুর রহমান। এই মিজানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে ওঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। 

“মিজানসহ অন্যরা পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।” 

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে মিজান জানিয়েছে, মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতা আমির হোসেন রকির (২৫) নেতৃত্বে সে রাজনীতি করে। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফা মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।”

Also Read: মুগদায় যাত্রী সেজে বাসে আগুন, যুবক গ্রেপ্তার

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই নেতার কাছ থেকে সব রসদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করে৷ এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। 

“প্রথম দিনের অবরোধে মিজান আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেয়। এ সময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করে, দল ক্ষমতায় আসতেছে, কোনও সমস্যা হবে না। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদেরকে,” বলেন আসাদুজ্জামান। 

সিটিটিসির প্রধান বলেন, দ্বিতীয় দফা অবরোধে রোববার রাজধানীতে ১০ টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, “রোববারও রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার তৎপরতা পুলিশ ঠেকিয়ে দেয়। আগুন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তার পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।”

রকির কাছ থেকে বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সে কী কী কাজ করেছে এই দুই দফা অবরোধে, কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে সব তথ্য দিয়েছে। 

“প্রথম দিনের অবরোধে কী পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করেছে, এই ফুটেজ পুলিশ তার মোবাইলে পেয়েছে।  অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে সবার নাম পেয়েছে পুলিশ।” 

সিটিটিসি প্রধান বলেন, “একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে রকি। প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিত, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দিয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কারের অর্থ পাঠানো হত৷” 

পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে তিনি তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। 

তবে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।