“আমরা আদিবাসীরা শান্তি চাই, আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই, আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিন।”
Published : 02 Oct 2024, 07:58 PM
খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানার জুম্ম ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনার জের ধরে জুম্মদের ওপর বাঙালিদের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘পাহাড়ের নিপীড়িত ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কুর্ণিকোভা চাকমা বলেন, “আমরা আদিবাসীরা শান্তি চাই, আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই, আমাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিন।”
তিনি এই হামলাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে বর্ণনা করে পাহাড়িদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, “কয়েকদিন আগেও সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নিয়ে আমরা রাজু ভাস্কর্যে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। আবারও সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার পাহাড়ের মানুষ।”
অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পার্বত্য এলাকায় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে, যা আমরা চাই না।”
“পাহাড়ের মানুষেরা এখন অবধি শান্তির পথে সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট রয়েছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী মানুষ অধিকার আদায়ে কী করতে পারে, তা আপনারা অতীতে দেখেছেন এবং ভবিষ্যতেও এ রকম অবস্থা হলে নিপীড়িত ছাত্র-জনতা রক্ত দিতেও পিছপা হবে না।”
বাংলাদেশ বৌদ্ধ ছাত্র সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিপন বড়ুয়া বলেন, “পাহাড়ের আদিবাসী বন্ধুরাও সক্রিয়ভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। তবে কেন পাহাড়ে এত বৈষম্য?
“সমতলে যারা নানা অপরাধী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করা হবে? তাহলে কি পাহাড়কে ‘পানিশমেন্ট জোন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়?”
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ সমাবেশ সংহতি জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, “দেশের বর্তমান পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। যে ব্যক্তির নামে ইতিমধ্যেই দুটি ধর্ষণের মামলা রয়েছে, সে কীভাবে আবারও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়?”
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি এন্টনি রেমা অভিযোগ করে বলেন, আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্র সংস্কারের একটি অংশ। সুতরাং আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ অবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, পাহাড়ি মানুষ যেমন কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমর্থন করে না, তেমনি সাম্প্রদায়িক হামলারও বিরোধতা করে।
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ধর্ষণের দায়ে দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন, তিনি কীভাবে বহাল তরিয়তে এখনও শিক্ষক থাকতে পারেন, কেন সেই শিক্ষকরূপী পশুকে যথাযথ বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি?
“রাষ্ট্র যদি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক হয় তাহলে আদিবাসীদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর বিচার করতে হবে।”
সমাবেশটির সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগরের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক হ্লামংচিং মারমা।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে মিছিল বের হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।