“ভাষা নিয়ে গবেষণাধর্মী বই বা ভাষাবিষয়ক অভিধান তো আর প্রতি বছরই প্রকাশ হয় না; তবে আগের প্রকাশিত বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশ হচ্ছে,” বলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।
Published : 20 Feb 2025, 11:58 PM
অমর একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমির স্টলে এসে ‘ভাষা আন্দোলন ও ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী’ নতুন বই চাইলেন এক ক্রেতা, যদিও স্টলের বিক্রয়কর্মীরা দিতে পারলে না নতুন কোনো বই।
রাসেল আব্দুল্লাহ নামে ওই ক্রেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলা একাডেমি থেকে বই পেলাম না। মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকেও জানাতে পারেনি কোন স্টলে পাওয়া যাবে।”
তার ভাষ্য, “গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ভাষা আন্দোলন বা ভাষা নিয়ে গবেষণার কোনো নতুন বই প্রকাশ করেনি বাংলা একাডেমি।”
প্রকাশকরাও বলছেন, পাঠকের চাহিদা থাকলেও পাণ্ডুলিপি সংকটে মেলায় ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী নতুন বই তেমন আসছে না।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাষা নিয়ে গবেষণাধর্মী বই বা ভাষা বিষয়ক অভিধান তো আর প্রতি বছরই প্রকাশ হয় না। তবে আগের প্রকাশিত বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশ হচ্ছে। বাংলা একাডেমির স্টলে সেই বইগুলো আছে।”
বাংলা একাডেমি থেকে সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলো সরাসরি ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে না হলেও একুশের চেতনাকে ধারণ করে প্রকাশ হয়েছে, বলেন মহাপরিচালক।
ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী বই প্রকাশের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলা একাডেমি আইনে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাজের কথা বলা হয়েছে। বাংলা একাডেমি থেকে যে বইগুলো প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো এই চিন্তার আলোকেই। গত ৩/৪ মাসে বাংলা একাডেমি থেকে যে বইগুলো বেরিয়েছে, সেগুলো একুশের চেতনার যে মর্মার্থ, তাকে ধারণ করে।”
বাংলাদেশের অন্য ভাষা নিয়ে কম কাজ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যে অন্য ভাষার জনগোষ্ঠী আছে, তাদের 'রিপ্রেজেন্টিটিভ' সংকলন তৈরি করে বাংলা সংস্করণ প্রকাশ করার কাজ চলছে।”
বইমেলায় ঘুরে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি স্টলে কেবল রয়েছে ভাষা এবং ভাষা আন্দোলন বিষয়ক নতুন বই। এর মধ্যে বেশি বই রয়েছে আগামী প্রকাশনীর স্টলে। ঐতিহ্য, অন্যপ্রকাশেও রয়েছে ভাষা বিষয়ক নতুন বই।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য এবার প্রকাশ করেছে শহীদুল ইসলামের সম্পাদনায় 'ভাষা বিতর্ক উনিশ শতক' ও এবাদুর রহমানের সম্পাদনায় 'পূর্ব বাঙলার ভাষা'।
পাঞ্জেরী এনেছে জান্নাতুল বাকেয়া কেকার 'ভাষা আন্দোলনের সাত দশক জানা অজানা'। অন্যপ্রকাশ এনেছে এম আবদুল আলীমের 'ভাষা আন্দোলনে নিম্নবর্গ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ'।
বইমেলার জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবারের মেলায় ভাষা বিষয়ক নতুন বই এসেছে ১২টি, এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এসেছে তিনটি নতুন বই।
এদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগামী প্রকাশনী জানায়, তারা এবারের মেলায় ভাষা আন্দোলন বিষয়ক তিনটি নতুন বই প্রকাশ করেছে। তবে মেলায় প্যাভিলিয়নে গিয়ে পাওয়া যায় দুটি। এর মধ্যে রয়েছে এম আবদুল আলীমের ভাষা আন্দোলনে আবদুল গাফফার চৌধুরী এবং আবদুন নূরের রক্তস্নাত একুশ।
স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বলেন, এম আবদুল আলীমের 'ভাষা আন্দোলনে মওলানা ভাসানী' বইটি ছাপাখানায় রয়েছে। শিগগিরই সেটি মেলায় আসবে।
বিগত বছরে আগামী প্রকাশনী থেকে আসা বইগুলো সাজিয়ে রাখা আছে প্যাভিলিয়নটিতে। এর মধ্যে রয়েছে হুমায়ুন আজাদের বাঙলা ভাষা (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড), হুমায়ুন আজাদের বাঙলা ভাষার শত্রুমিত্র, ভাষা-আন্দোলন: সাহিত্যিক পটভূমি, রফিকুল ইসলামের 'ভাষাতত্ত্ব', 'শহীদ মিনার', 'বাংলাদেশের সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন' ও 'মুক্তিযুদ্ধ, অমর একুশে ও শহীদ মিনার'।
এ ছাড়া বশীর আল হেলালের 'ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস', 'বালাভাষার নানান বিবেচনা', রফিকুর রশীদের 'ছড়িয়ে গেল ভাষার লড়াই', মোহাম্মদ হাননানের 'ভাষার লড়াই', এম আবদুল আলীমের 'রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন জেলাভিত্তিক ইতিহাস', 'রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে রফিকুল ইসলাম', 'পাবনায় ভাষা আন্দোলন', 'সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন', 'ভাষাসংগ্রামী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্', মোহাম্মদ আমীনের 'বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসহ কয়েকটি বই সাজানো আছে আগামী প্রকাশনীর স্টলে।
গবেষক মফিদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভাষা নিয়ে গবেষণাধর্মী কিছু বই প্রকাশ হয়। তবে সেই বইগুলো খুব বেশি প্রচারের আলোয় আসে না। মেলায় তো চলতি বইগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। আর গবেষণাধর্মী বই বছরজুড়েই প্রকাশ হয়।"
বাংলাদেশেই বহুভাষার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভাষা নিয়ে নানা আঙ্গিকে গবেষণা হওয়া জরুরি। এ ধরনের গবেষণা যে সময়সাপেক্ষ। এজন্য সংখ্যা দিয়ে গবেষণাধর্মী বইকে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না।”
মেলায় বাংলানামা প্রকাশনী গত বছর এনেছিল 'মায়ের ভাষার জন্য' নামে একটি শিশুতোষ বই। বাংলানামার প্রকাশক হোসেন শহীদ মজনু বলেন, “মেলায় থাকা সব বই বাংলা ভাষারই বই। তবে ভাষা আন্দোলন বা ভাষা বিষয়ক গবেষণাধর্মী বই আরও বেশি থাকা উচিত।”
বইমেলার ২০তম দিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় মেলা শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১১২টি।
মেলায় এদিন বেশি ভিড় না থাকলেও এদিন একুশের শোক গায়ে মেখে কালো পোশাকে অনেকেই আসেন মেলায়। কিছু স্টলের বিক্রয়কর্মীদেরও দেখা যায় কালো পোশাকে।
খিলগাঁ থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবার মেলায় এসেছিল ইমরানা আফসিন ইনায়া, কালো শাড়ি পরেছিল সে। এক প্রশ্নে ইনায়ার জবাব, ‘মা পরিয়ে দিয়েছে’।
ইনায়ার মা সাদিয়া ইয়াসমিন বলেন, “একুশের শোককে ধারণ করে তারা এই কালো পোশাকে মেলায় এসেছে।”
বৃহস্পতিবার লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গদ্যকার শাহাবুদ্দীন নাগরী ও কবি ইমরান মাহফুজ।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘উপন্যাস, ‘ঔপন্যাসিক ও রশীদ করীমের উপন্যাসবীক্ষা: কয়েকটি প্রসঙ্গ’ আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু।
একুশে ফেব্রুয়ারির আয়োজন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস ঘিরে শুক্রবার প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হবে।
এদিন বইমেলা শুরু হবে সকাল ৭টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি হাসান হাফিজ।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
আরও পড়ুন-