“আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ও অজস্র নাগরিকের ওপর ঘটে যাওয়া গণহত্যা, দমন-পীড়ন ও আইনের শাসনের প্রতি যে অবজ্ঞা দেখেছি, তা অবশ্যই আমাদের সংবিধানে স্থান পাওয়া উচিত,” বলেন তিনি।
Published : 03 Nov 2024, 12:08 AM
সংবিধানে যাতে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার কোনো সুযোগ না থাকে, সেই আলোকে সংশোধনীর তাগিদ দিয়েছেন ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান কামাল হোসেন।
তিনি বলেছেন, “সংবিধান সম্পর্কে কথা বলার সময় আমি প্রায়শই দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানের স্থপতি জাস্টিস আলবি স্যাকসের উদ্ধৃতি দেই। তিনি বলেছিলেন, (সংবিধান লেখার) অধিকার আমাদেরকে কেউ দেয় না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার অর্জন করি। কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে এই অধিকার আমাদের প্রাণে রক্ষিত থাকে।
“ঠিক একইভাবে, ১৯৭১ এ আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অধিকার নিয়ে সংবিধান রচনা করেছিলাম, যেখানে বৈষম্য নিরসন এবং ধর্ম নিরপেক্ষতায় একটি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবারের আন্দোলন আবারও বৈষম্য নিরসনের বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। একইসঙ্গে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার কোনো সুযোগ যাতে না থাকে, সেই আলোকে সংবিধানের সংশোধনীর সুপারিশ তৈরি করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনে ‘অভ্যুত্থান ও রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার: সংবিধান বিষয়ে কর্তব্য ও গন্তব্য’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে কামাল হোসেনের ওই বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে’ তিনি বক্তব্য দেননি। তার লিখিত বক্তব্য সেখানে পাঠ করেন সংবিধান গবেষক আরিফ খান।
লিখিত বক্তব্যে কামাল হোসেন বলেন, “আমরা একটা ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে। আজকে বাংলাদেশের সংবিধানের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছি। সাম্প্রতিক ছাত্র-ছাত্রী এবং জনতার সফল এক আন্দোলনের পর, আমাদের সামনে একটি গুরুদায়িত্ব এসেছে আমাদের সংবিধানকে নতুন পর্যালোচনা করার।
“…গত জুলাই অগাস্ট মাসে আমরা যে ভয়াবহ এবং কষ্টদায়ক ঘটনাবলি দেখেছি, তা আমাদের অন্তরাত্মাকে নাড়া দিয়েছে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ও অজস্র নাগরিকের ওপর ঘটে যাওয়া গণহত্যা, দমন-পীড়ন ও আইনের শাসনের প্রতি যে অবজ্ঞা আমরা দেখেছি, তা অবশ্যই আমাদের সংবিধানে স্থান পাওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্ব হল সংবিধানকে এমনভাবে সংশোধন করা এবং চর্চা করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয়। আমরা যেন এই শিক্ষাগুলোকে আমাদের সংবিধানের মূল কাঠামোতে গেঁথে দিতে পারি, যাতে কোনো নাগরিকের সঙ্গে অন্যায়, অবিচার আবার না ঘটে। এটাই হবে আমাদের সংবিধানের সত্যিকারের পরীক্ষা।
“আমাদের নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে, একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায়সংগত এবং সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতভেদ এবং প্রতিবন্ধিতা বা জাতিসত্তার কারণে কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। আগামীতে আমাদের এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংবিধান নিয়ে এবং সময় উপযোগী সংস্কারের বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরিফ খান। চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান।