তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
Published : 05 Feb 2025, 06:31 PM
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে ঘুষের মামলায় এবং ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে অবৈধ সম্পদের মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
শিবলী ও আলমগীরকে বুধবার ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজে আদালতে হাজির করে দুদকের পক্ষ থেকে রিমান্ডের এই আবেদন করা হয়। অন্যদিকে দুই আসামির পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।
শুনানি শেষে শিবলী ও আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে বিচারক জাকির হোসেন গালিব রিমান্ড শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে রিমান্ড বাতিল আবেদন ও জামিন আবেদনের যথাযথ নথি না থাকায় বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ঠিক করেছে আদালত। দুজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে বুধবার একটি মামলা দায়ের করেন।
মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয় সেখানে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন– মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের প্রোপাইটর আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের সাবেক ইনচার্জ এবং বর্তমান এফএভিপি ইসরাত জাহন, ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ২০২০ সালের ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের ১০ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে ব্রেকারেজ হাউজের পরিচালক আসামি জাভেদ এ মতিনের ‘নামসর্বস্ব’ আমেরিকান কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিং ইনকরপোরেশনের ব্যাংক হিসাব থেকে শিবলীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়।
শিবলী ওই অ্যাকাইন্টের মাধ্যমে নেওয়া ‘ঘুষকে’ বৈধতা দেওয়ার জন্য জাভেদ এ মতিনকে অ্যাকর্ড অ্যাপারেল ইনকর্পোরেশন, ইউএসএ-এর চেয়ারম্যান দেখিয়ে একটি ভুয়া বাড়িভাড়া চুক্তি করেন।
একইভাবে শিবলী পরিচালিত ‘নামসর্বস্ব’ কোম্পানি ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স ও মোনার্ক হোল্ডিংস ইনকের মধ্যে ভুয়া পণ্যবিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে ৩ লাখ ৬১ হাজার ডলার দেশে এনে নিজের ঋন পরিশোধ বাবদ ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ২৯৬ টাকা ও বিভিন্ন তারিখে নগদ উত্তোলন করে ৯৫ লাখ ২ হাজার ৫২৪ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক বলছে, দুটি ঘটনায় শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা ‘ঘুষ’ নিয়ে এবং তার সহযোগীদের তার অবৈধ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন।
এদিকে ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করে দুদক।
এজাহারে দুদক বলেছে, আলমগীরের নামে এবং পারিবারিক ব্যয়সহ ৮১ কোটি ৩৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ টাকা। সেই হিসেবে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন প্রায় ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৯০৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।
গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের একটি অভিযোগ ২০২৩ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।