“হাজী মোহাম্মদ সেলিম কথা বলতে পারেন না, তাহলে তাকে কী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে? তাকে রিমান্ডে নেওয়া অযৌক্তিক,” বলেন তার আইনজীবী।
Published : 02 Sep 2024, 10:14 PM
কলেজছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের রিমান্ড শুনানিতে হট্টোগলের কারণে সম্পূর্ণ শুনানি করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী।
সোমবার রিমান্ড শুনানি শেষে হাজী সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আক্তারুজ্জামান।
এদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হাজী সেলিমকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর মাথায় হেলমেট ও শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে তাকে এজলাসে তোলা হয়। কাঠগড়ায় তোলার তাকে কাঁদতে দেখা যায়।
রাষ্ট্রপক্ষে সহযোগিতা করার জন্য শুনানি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। অন্যদিকে হাজী সেলিমের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ।
শুনানি শুরু আগেই ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, “আদালতের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে উনারা (আসামী পক্ষের আইনজীবী) শুধুমাত্র একজন বক্তব্য দেবেন এবং বক্তব্য সংক্ষেপে দেবেন। আমি অনুরোধ করব, উনারা এমন কোনো বক্তব্য দেবেন না যেটাতে অডিয়েন্স বিক্ষুব্ধ হয়ে যায়। আমরা চাই তারা আইনি সহায়তা করুক, তারা আইনি সহায়তা পাক।”
আদালতে উপস্থিত বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনার পেছন থেকে কোনো শব্দ করবেন না।”
তার কথায় সায় দিয়ে শ্রী প্রাণ নাথ বলেন, “আমিও শুধুমাত্র একজন কথা বলার পক্ষেই আছি।”
এরপর আদালত আসামিকে ওকালনামায় সই করতে বললে হাজী সেলমি ইশারা দিয়ে জানান, তিনি লিখতে অক্ষম। এসময় পেছন থেকে কয়েকজন আইনজীবী হৈ চৈ করে ওঠেন। কয়েকজন টিপ্পনি কেটে হাজী সেলমিকে জগন্নাথে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।
হাজী সেলিম স্বাক্ষর করতে ‘অক্ষম’ হওয়ায় বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ওকালতনামায় তার টিপ সই নেওয়া হয়।এরপর আদালতকে রিমান্ড আবেদন পড়ে শোনান প্রসিকিউশনের আদালত পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত ১৮ জুলাই বিকাল ৬টায় লালবাগ থানাধীন আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় ২০ তলা ভবনের ৭ নম্বর বিল্ডিংয়ের পাশে রাস্তার ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল চলছিল। এ মামলার আসামিদের ‘নির্দেশনায়, পরিকল্পনায় এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে’ মিছিলের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি বর্ষণ করা হয়। তাতে অনেক নিরস্ত্র ছাত্র জনতা আহত হয়। তাদের মধ্যে আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।
পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, “মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলির উৎস সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”
এরপর শুনানি করেন আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে জমি দখলসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন।
ফারুকী বলেন, “এমন কোনো কাজ নাই যেটা তারা করেন না। পৃথিবীতে এমন কোনো নজির নাই যেটাতে ৩০০ জন সংসদ সদস্য একসাথে পালিয়ে যান এবং প্রধানমন্ত্রীসহ পালিয়েছে। পুরো মন্ত্রিপরিষদ পালিয়েছে এবং তাদের সন্তান, পুত্র-পুত্রী-জামাই সবাই পালিয়েছে। এত অপকর্ম তারা এদেশের মানুষের সাথে করেছেন।”
এ আইনজীবী বলেন, “এই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। এ হত্যার সাথে কারা জড়িত এবং এই হত্যার বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য ও জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার মূল রহস্য উদাঘটনের জন্য ঠিক ১০ দিনই রিমান্ড দিতে হবে।”
তার বক্তব্য শেষে ডায়াসের মাইকে কথা বলে যান হাজী সেলিমের আইনজীবী শ্রী প্রাণ নাথ। এসময় তাকে মাইক ব্যবহারে বাধা দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
প্রাণনাথ বলেন, “এই মামলাটা হচ্ছে হত্যার মামলা। ওনারা রাষ্ট্র পক্ষে প্রসিকিউশনে যে জমি দখলসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন তার সাথে এই ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করলে তার বক্তব্য তলিয়ে যায়। দুই মিনিট পর ওমর ফারুক ফারুকীর হস্তক্ষেপে আইনজীবীরা শান্ত হলে আবারও প্রাণ নাথের বক্তব্য শোনা যায়।
তিনি বলেন, “মামলার এজাহারে স্পষ্টভাবে বলা আছে, ডিসির (পুলিশ উপ কমিশনার) নেতৃত্বে পুলিশ গুলি করেছে। তাহলে এই হত্যাকাণ্ডে আমি (হাজী সেলিম) কীভাবে নেতৃত্ব দিই?”
তার এ কথার পর আবারও হট্টগোল শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এরপর প্রাণ নাথকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন বিচারক।
এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ১০ দিনের রিমান্ড দেওয়ার জন্য হট্টগোল শুরু করলে দ্রুত এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
এরপর বিএনপিপন্থি আইনজীবী চড়াও হন প্রাণ নাথের উপর। তারা ‘ভোট চোর ভোট চোর, প্রাণ নাথ ভোট চোর’ স্লোগান দিতে থাকেন।
শুনানি শেষে প্রায় ১০ মিনিট কাঠগড়ায় অবরুদ্ধ থাকেন হাজী সেলিম। এসময় পুলিশ আইনজীবী প্রাণ নাথকেও নিরাপত্তা দেয়।
এজলাস থেকে বের হয়ে আইনজীবী প্রাণ নাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আদালতকে বলেছি হাজী মোহাম্মদ সেলিম কথা বলতে পারেন না, তাহলে তাকে কী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে? তাকে রিমান্ডে নেওয়া অযৌক্তিক।
“আমি বলতে চেয়েছি, নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিকে জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রেও জামিন দেওয়া যায়। যেহেতু তিনি বয়স্ক এবং অসুস্থ, তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু আমি আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ উপস্থাপন করতে পারিনি।”
পুরনো খবর