“সংস্কার কর্মসূচিগুলো অগ্রসর হওয়া দরকার এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার যাতে করে আমরা নির্বাচনের পথে অগ্রসর হতে পারি,” বলেন তিনি।
Published : 15 Feb 2025, 09:31 PM
সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘ঐক্যমত্য প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে কোনোরকম দ্বিধার সুযোগ নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে কমিশনের তরফে সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “সর্বোপরি যেটা, সেটা হচ্ছে, ঐকমত্য প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে কোনোরকম দ্বিধার সুযোগ নাই।
"এবং সেই প্রক্রিয়াটাই দ্রুত অগ্রসর করতে চাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে। এটাই হচ্ছে আজকের বক্তব্য।”
এ সময় তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়াটায় আমরা দীর্ঘসুত্রতা করতে চাই না। আমরা আশা করছি, স্বল্প, কিছুদিনের মধ্যেই এটা করতে পারব।
“এই প্রক্রিয়াটা অব্যাহত রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, যে সমস্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সে প্রতিবেদনগুলো তাদের কাছে যেন হার্ড কপি আকারে পৌঁছে দেওয়া হয়। আমরা হার্ড কপিগুলো দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব কমিশনের পক্ষ থেকে।”
এ বৈঠক অব্দি যা হয়েছে তা ‘সূচনার কাজ’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু কাজ হয়েছে সেটা হচ্ছে সূচনার কাজ। আশা করি এই প্রক্রিয়াটা অগ্রসর করতে পারব।”
কতদিন সংলাপের জন্য লাগতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এই সংলাপে আপনারা লক্ষ্য করুন, এই কমিশনেরই মেয়াদ দেওয়া হয়েছে ছয় মাস। সেক্ষত্রে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, কমিশনের পক্ষ থেকে লক্ষ্য হচ্ছে, যতদ্রুত সম্ভব আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে চাই।
“কিন্তু যেহেতু ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন এবং আমরা ইতোমধ্যেই সারাংশ রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছি, তারা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখন দেখছে। তবে পর্যালোচনা করার জন্য একটু সময় তাদের দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই অত্যন্ত দ্রুততার সাথে, কেননা এই সংস্কার কর্মসূচিগুলো অগ্রসর হওয়া দরকার এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার যাতে করে আমরা নির্বাচনের পথে অগ্রসর হতে পারি।
“আমরা আশা করছি যে ছয় মাসের চেয়ে কম সময়ে যদি সম্ভব হয় তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ আছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও মনে করে যত দ্রুত সম্ভব। কিন্তু এটা তো অকস্মাৎ হবে না।”
এ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে কিছুটা সময় লাগবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবেদনগুলো মাত্র পেয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে, সংস্কার কমিশনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিঃসন্দেহে সেগুলো পর্যালোচনা করবে। তাদের যথেষ্ট পরিমাণ সময়ও দিতে হবে পড়ার জন্য, পর্যালোচনা করার জন্য।
“ফলে কিছুটা সময় লাগবে এই প্রক্রিয়াটা অগ্রসর হতে। কিন্তু মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে, যতটা বাস্তবে সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে আমরা আলোচনাগুলো শুরু করব।”
এদিন বিকাল ৩টায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ বৈঠকে বসে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এটি কমিশনের প্রথম বৈঠক।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), নাগরিক ঐক্য, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন।
আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারির নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক কমিটিও এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।
নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে ঐকমত্য কমিশন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয় কমিশনের পুরো প্রতিবেদন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গেও কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কথার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে কতটুকু সংস্কার দ্রুত করতে হবে, কতটুকু পরে করা যাবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করবে সরকার। এ জাতীয় সনদের ভিত্তিতে হবে নির্বাচন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন জমির উদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মশিউল আলম।
ইসলামী আন্দোলনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
খেলাফতে মজলিশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন আমিরে মজলিশ মাওলানা আবদুল বাছিদ আজাদ ও মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের। মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে এবি পার্টির প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দেন।
কমিশনের ‘চূড়ান্ত’ সিদ্ধান্তের পর শিগগিরই নির্বাচন চায় জামায়াত
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “আমরা এটা বলেছি যে এই সংস্কার কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরে যথা শিগগির সম্ভব যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্যে।
“আজকে মূলত এটাই ছিল জিস্ট অব দ্য ডিসকাশন।”
তিনি বলেন, “আজকে প্রধান উপদেষ্টা এবং রিফর্ম কমিশনের নতুনভাবে যারা সদস্য ছিলেন, তাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। উনারা কীভাবে এটা করবেন এবং বিভিন্ন দলের সাথে, স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলাদাভাবে আলোচনা করবেন, সেটা আলোচনা হয়েছে।
“আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি। এবং সকল পজিটিভ সিদ্ধান্তে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন জানাবে, আমরা এটা ঘোষণা করছি।”
বিস্তারিত অভিমতের বিষয়ে তিনি বলেন, “আর ডিটেইলসটা উনারা (কমিশন) আমাদের বই দিবেন। সেটা পর্যালোচনা করে আমরা জামায়াতে ইসলামী এবং ওই যে টিম আছে সরকারের, তার সাথে আলাদা বৈঠক হবে, মতবিনিময় হবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত এবং আলোচনা জানাব। এটাই আজকের মূল প্রতিপাদ্য।
“আমরা বলেছি যে সংস্কার প্রয়োজন, এইজন্য সংস্কটার ওপর আমরা ঐকমত্য হই, তারপরে যথা শিগগিরি সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা তো বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে উনারা করবেন, আমরা সেটা দেখছি হাউ ইট গোজ।”