৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে সিইসির বিদেশিদের ‘থাবা’ নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের আলোচনার মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মোমেন।
Published : 27 Nov 2023, 08:15 PM
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শকে ‘গুরুত্ব’ সহকারে নিলেও সরকার দেশের ‘বাস্তবতা’ অনুযায়ী কাজ করে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশিদের ‘থাবা’ আসার বিষয়ে সিইসির বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সোমবার মোমেন বলেন, “আমি বক্তব্যটা শুনি নাই। তবে এটা তো সত্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি, আমরা তাদেরকে ইগনোর করতে পারি না। আমরা করিও না, করার ইচ্ছাও আমাদের নাই।
“এজন্য আমরা তাদের পরামর্শকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। তবে আমাদের দেশের একটা বাস্তবতা আছে, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করি।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘বাইরের থাবা এসেছে’ মন্তব্য করে সোমবার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
ভোট আয়োজনের নানা পদক্ষেপের মধ্যে ‘বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ও তৎপরতা দুঃখজনক বাস্তবতা’ বলেও উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে অর্থনীতির চাপ পড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচনে আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক বৈশিষ্ট হচ্ছে আমাদের নির্বাচনে বাইরে থেকেও থাবা, হাত এসে পড়েছে। তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, পোশাক শিল্পসহ অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল করতে হবে।”
নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিভিন্ন বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, “আমাকে যেভাবে ইউনাইটেড স্টেটস কমান্ড করতে পারে। আমি সেভাবে ইউনাইটেড স্টেটসে গিয়ে হুমকি-ধামকি দিতে পারছি না, পারব না। এটা আরেকটা বাস্তবতা।”
এ সময় প্রতিটি দেশের ‘সার্বভৌমত্ব’ বিষয়টিও ‘আপেক্ষিক’ বলে মন্তব্য করেন সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনের প্রধান।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে সিইসির এসব বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে সেটা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
তিনি বলেন, “বাস্তবতার নিরিখে তারা যদি কিছু প্রস্তাব দেয়, তাদের সাথে আমরা ধারাবাহিক সম্পৃক্ততা, যোগাযোগ রেখেছি। ভালো-মন্দ আমরা তাদের বলি এবং তারাও আমাদের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে করেন।”
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বাস্তববাদী’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, কোনো একটি ইস্যুতে শুরুতে কোনো অবস্থান নিলেও পরে ‘সত্যি সত্যি ঘটনা’ ঘটে গেলে আগের অবস্থান পাল্টায়।
“আমেরিকা সবসময় বাস্তববাদী। আমেরিকা বিলিভস ইন ডকট্রিন অব রিয়েলিটি… যখন সত্যি সত্যি ঘটনা হয়ে যায়, তাকে সাপোর্ট দেয়।”
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের অবস্থানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, নিজেদের দেশের ও আন্তর্জাতিক আইনকানুন ভেঙ্গে পাকিস্তানের জান্তা সরকারকে গণহত্যায় সহায়তা করেছিল।
“কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর যখন আমরা স্বাধীনতা পেলাম, এরপর থেকে আমাদেরকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা দিয়ে গেছে, অবিচলভাবে। তার মানে হচ্ছে, দেশ হয়ে গেছে, আমরা তার সাথে আছি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি, আমরা নিজেরা চাই একটা সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন। আমরা যদি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করি, অবশ্যই আমেরিকা… তাদেরও একমাত্র দাবি, আমেরিকা কিন্তু বেশি কিছু চায় নাই, তারাও চাই অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন, আমরাও চাই। তারা আমাদেরকে সাহায্য করছে।
“বরং তাদের আমরা বলব, যারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করতেছে, তাদেরকে তারা ভিসা নীতির মধ্যে ঢুকাক, তারা তাদের যা খুশী করার করুক। আমরা চাই অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন।”
বিএনপির মতো বড় দলের বর্জনের মধ্যে নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা যদি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় অবশ্যই গ্রহণ করবে। একটি বড় দল যদি না আসে, আপনার দেখেন মিশরে বড় ছিল ব্রাদারহুড, আসেনি। বিষয় না।
“আফগানিস্তানে বড় দল ছিল তালেবান। আসতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারা গ্রহণ করেছিল। সুতরাং কোনো একটি দল বিশেষ যদি না আসে, এটা অতোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দল থাকলেও সব দল নির্বাচনে আসে না বলেও মন্তব্য করেন দীর্ঘদিন দেশটিতে কাটিয়ে আসা মোমেন।
তৈরি পোশাক রপ্তানিসহ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার বিষয়ে সিইসির বক্তব্য উল্লেখ করে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নাই।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালে কোটা উঠিয়ে দেওয়ার পর বড় ধরনের ধাক্কা আসার শঙ্কা করা হলেও তা না হয়ে রপ্তানি ‘কয়েকগুণ বেড়েছিল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অনেক সময় বাঘ আসে বাঘ আসে চিৎকার, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ওইসব কিছু না। আমরা জিনিসপত্র যে বিদেশে বিক্রি করি, আমাদের কেউ দয়া দাক্ষিণ্য করে না। আমরা স্বস্তায় ভালো জিনিস যথাসময়ে বিক্রি করি বলেই তারা কিনে।
“আর আমেরিকায় এটা প্রাইভেট সেক্টরে, প্রাইভেট লোকগুলো কিনে। তারা যেখানে ভালো পায়, স্বস্তা পায়, ভালো মান, ঠিক সময়ে সরবরাহ করে ওদের কাছে যায়। আমরা সেখানে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছি। সুতরাং আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নাই।”
আগে থেকে নির্বাচন নিয়ে উচ্চকণ্ঠ হলেও এখন কূটনীতিকরা নিরব রয়েছেন। সরকার কি তাদেরকে ‘বাধ্য’ করেছে কি না-এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কী বলেন! বাধ্য করব কীভাবে? পাগল না কি! কোনো উপায় নাই। আমাদের সেই ক্ষমতা নাই।
“আমাদের বন্ধুদেশ যারা, তারা অনেক সময় আমাদেরকে উপদেশ দেয়, যেটা ভালো সেটা আমরা গ্রহণ করি। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। আমরাতো সবার মত পণ্ডিত না। অন্যের যদি ভালো উপদেশ থাকে, আমাদের যদি স্বচ্ছ-সুন্দর নির্বাচনের জন্য তারা সহায়কের ভূমিকা পালন করে, আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাব।”
নির্বাচনে বাইরের থাবা, হাত এসেছে: সিইসি
‘অর্থবহ সংলাপের’ সুপারিশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারও ‘একমত’
বাংলাদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের লক্ষ্য: যুক্তরাষ্ট্র
নির্বাচনের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ শোনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উন্নত দেশ, তাদের তো আমরা কখনও অগ্রাহ্য করতে পারি না।
“তারা আমাদের বন্ধু দেশ, সব সময় বিভিন্ন রকম সম্পর্ক আমাদের আছে। শুধু নির্বাচন তো না, বিভিন্ন রকম সম্পর্ক। আমরা তাদেরকে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করব।”