“তারা যেমন নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায়, তেমনই একই আত্মবিশ্বাসে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে চায়,” বলেন তিনি।
Published : 20 Feb 2025, 02:11 PM
এবারের অমর একুশে নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের অমর একুশে নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক। আমাদের স্বাধিকার চেতনার প্রাণপ্রবাহ একুশে ফেব্রুয়ারি।
“১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল।”
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি এক নতুন বাংলাদেশ। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে সুযোগ এসেছে নতুন এক বাংলাদেশ নির্মাণের।
“আজ এই পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দেশমাতৃকার জন্য বিভিন্ন লড়াই-সংগ্রাম, বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যে সকল সাহসী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন- তাদের সকলকে।”
একুশে পদকপ্রাপ্তদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের অবদানের জন্য জাতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আপনারা জাতির পথ প্রদর্শক। আপনাদের অবদানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি দৃঢ় বিশ্বাসে জাতিপুঞ্জের মজলিসে ক্রমাগতভাবে উন্নততর অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।”
সরকারপ্রধান ইউনূস বলেন, “'আমরা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বেশি শক্তিশালী, উদ্যমী এবং সৃজনশীল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যেকোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চাইতে দুঃসাহসী। তারা যেমন নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চায়, তেমনই একই আত্মবিশ্বাসে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে চায়।
“নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে তারা নেতৃত্ব দিতে চায়। সে নেতৃত্ব দেবার জন্য তারা প্রস্তুত। ছেলেরাও প্রস্তুত, মেয়েরাও প্রস্তুত। তারা ঘুণে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা গড়তে চায়।”
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিতে অনুষ্ঠানে ১৫টি পদক দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন-প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজ, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহির, সংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা, লেখক মঈদুল হাসান, চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান, সংগীত শিল্পী ও শিক্ষক ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়া, চিত্রশিল্পী রোকেয়া সুলতানা, অনুবাদক ও গবেষক নিয়াজ জামান, অভ্র ফন্টের নির্মাতা মেহেদী হাসান খান ও তার দল, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন ও শহীদুল আলম, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লা ও মাহমুদুর রহমান, চট্টগ্রামের সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।