আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ভোটের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছেন।
Published : 07 Jan 2024, 12:03 AM
শেষ সময়ে ভোটের প্রস্তুতির ব্যস্ততার মাঝেও চলছে হিসাব-নিকাষ, কেন্দ্রে কেন্দ্রে শেষ হাসি কাদের হবে চলছে সেই জল্পনাও। সেই সঙ্গে আগ্রহ রয়েছে ভোট এবার পড়বে কতটা আর দলের প্রতীকে ভোটের হার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
বর্জনের ভোটে বিএনপি না থাকায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাই বিজয়ীর তালিকার বড় অংশজুড়ে থাকবেন বলে প্রাথমিক অনুমান। তবে দলের প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হওয়ার সুযোগ থাকায় এবার নজরে থাকছেন তারাও।
ভোটারদের কেন্দ্রে আনার চ্যালেঞ্জের মধ্যে হতে যাওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থীর জয় পরাজয়ের পরিসংখ্যানের পাশাপাশি দলের ভোট কেমন হবে সেটিও রয়েছে আলোচনায়।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে ভোট গ্রহণের পর রাতেই অনেকটা জানা হয়ে যাবে এ হিসাব নিকাশ। কোন প্রতীকে পড়ছে মোট ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন ভোটারের পছন্দের ছাপ।
আগের ভোটের খতিয়ান
দেশে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ২০১৮ সালের সবশেষ একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিল। নৌকা প্রতীকে ৭৭% ভোট পড়ে, যা দলীয় ভোটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রেকর্ডের বিপরীতে ভরাডুবি হয়ে বিরোধীদের। ১৯৭৯ সালের পর থেকে বিএনপি (১৪%) ও ১৯৮৬ সালের পর থেকে জাতীয় পার্ট (৫%) সর্বনিম্ন ভোট পায়।
বিএনপির বর্জন, এবার দল ২৮টি
এবারের ভোট নেই বিএনপি। তাদের বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ রয়েছে ২৮টি দল। স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রায় সাড়ে চারশ’, যা এখন পর্যন্ত ১১টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯৭ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন
এবার নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী রয়েছেন ১৯৬৯ জন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র ৪৩৭জন এবং বাকি ১৫৩২ জন হচ্ছেন দলের প্রার্থী। ভোটের মাঝপথে নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যু হলে ভোট স্থগিত করা হয়। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুই জন প্রার্থী রয়েছে এখন, নতুন তফসিলে নতুন প্রার্থীও যোগ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রথম সংসদ | দ্বিতীয় সংসদ | তৃতীয় সংসদ | চতুর্থ সংসদ | পঞ্চম সংসদ | ষষ্ঠ সংসদ | সপ্তম সংসদ | অষ্টম সংসদ | নবম সংসদ | দশম সংসদ | একাদশ সংসদ |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
৭ মার্চ ১৯৭৩ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ | ৭ মে ১৯৮৬ | ৩ মার্চ ১৯৮৮ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | ১২ জুন ১৯৯৬ | ১ অক্টোবর ২০০১ | ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৫ জানুয়ারি ২০১৪ | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ |
৫৫.০০% | ৫১.১২% | ৫৯.৫৮% | ৫৪.৯২% | ৫৫.৪৫% | ২৬.৫০% | ৭৪.৯৬% | ৭৫.৫৯% | ৮৭.১৩% | ৪০.০৪% | ৮০.০০% |
এক নজরে যত বর্জন
>> ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে
>> ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অধিকাংশ দল বর্জন করে
>> ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ দল বর্জন করে
>> ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও শরিকরা বর্জন করে। ১৫৩ আসনে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন; ভোট হয় ১৪৭ আসনে
সবশেষ ভোট: ২০১৮
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ও শরিক কয়েকটি দল মিলে নৌকার প্রার্থী ছিলেন ২৭১ জন। তাদের মধ্যে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হন ২৬৫টি আসনে। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ পায় ২৫৭ আসন, ভোট পায় প্রায় ৭৭%।
অন্যদিকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন মোট ২৮১ জন। সব মিলিয়ে প্রদত্ত ভোটের ১৩.৫১ শতাংশ পায় ধানের শীষের প্রার্থীরা। অতীতে বিএনপির ভোটের হার মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করত। এত কম ভোট বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে পায়নি। এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা জয় পান পাঁচটি আসনে। আর জোটগতভাবে তারা পায় সাতটি আসন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থগিত আসনেও বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন।
অন্যদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ১৭৪ আসনে তাদের লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী দিয়ে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫.৩৭ শতাংশ পায়। লাঙ্গলের ইতিহাসে এটাই সর্বনিম্ন ভোট। ভোটের অঙ্কে বিএনপির চেয়ে কম হলেও জাতীয় পার্টি সেবার আসন পায় ২২টি।
ভোটের পরিসংখ্যানে দলগত অবস্থান: ১৯৭৩-২০১৮
আওয়ামী লীগ | বিএনপি | জাতীয় পার্টি | ||||
---|---|---|---|---|---|---|
সাল | ভোট প্রাপ্তির হার | আসন | ভোট প্রাপ্তির হার | আসন | ভোট প্রাপ্তির হার | আসন |
১৯৭৩ | ৭৩.২০% | ২৯৩ | - | - | - | - |
১৯৭৯ | ২৬.৮৩% | ৩৯ | ৪১.১৬% | ২০৭ | - | |
১৯৮৬ | ২৬.৮৩% | ৭৬ | - | - | ৪২.৪৩% | ১৫৩ |
১৯৯১ | ৩১.৮১% | ৮৮ | ৩০.৮১% | ১৪০ | ১১.৯২% | ৩৫ |
১৯৯৬ | ৩৭.৪৪% | ১৪৬ | ৩৩.৬১% | ১১৬ | ১৬.৪০% | ৩২ |
২০০১ | ৪০.২১% | ৬২ | ৪০.৮৬% | ১৯৩ | ৭.২৬% | ১৪ |
২০০৮ | ৪৮.০৪% | ২৩০ | ৩২.৫০% | ৩০ | ৭.০৪% | ২৭ |
২০১৪ | ৭২.১৪% | ২৩৪ | - | - | ৭.০০% | ৩৪ |
২০১৮ | ৭৬.৮০% | ২৫৭ | ১৩.৫১% | ৬ | ৫.৩৭% | ২২ |
স্বতন্ত্রের আগের খতিয়ান
>> ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ১২০ জন। তারা ভোট পেয়েছিলেন ৫.২ শতাংশ।
>>১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে ২ হাজার ১২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ৪২২ জন। তারা পেয়েছিলেন মোট ভোটের ১০.১০ শতাংশ।
>> ১৯৮৬ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্যে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ৪৫৩ জন। তবে সেই নির্বাচনে তারা খুব একটা ভোট টানতে পারেননি, ভোট পান ১.৭৩ শতাংশ।
>> ১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের বর্জনের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোট পান। মোট ৯১৯ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ২১২ জন। তারা পান প্রদত্ত ভোটের ১৩.৫০ শতাংশ।
>> ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ২ হাজার ৭৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ৪২৪ জন, তারা পান ৪.৩৯ শতাংশ।
>> ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের বর্জনের মধ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৪৫০ জন। সেই নির্বাচনের অনেক তথ্যই পাওয়া যায় না। তবে স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থীদের ১০টি আসনে জয়ের তথ্য আছে।
>> ১৯৯৬ সালের জুনের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ২ হাজার ৫৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ২৮৪ জন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট পড়ে ১.০৬ শতাংশ।
>> ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোট, দুটোই আবার বাড়ে। সেই বছর ১ হাজার ৯৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ৪৮৬ জন, তারা পান প্রদত্ত ভোটের ৪.০৬ শতাংশ।
>> ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কড়াকড়ি করে তৎকালীন ইসি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভোটারদের আগাম সমর্থনের প্রমাণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী কমে হয় ১ হাজার ৫৬৭ জন, যারা মোট ভোটের ২.৯৮ শতাংশ পায়; আসন পায় ৪টি।
অ্যাপে মিলছে ভোটের তথ্য, নেই প্রচার
স্মার্ট অ্যাপে দুই ঘণ্টা পর পর জানা যাবে ভোট পড়ল কত
>> আনুপাতিক হারে স্বতন্ত্র সবচেয়ে বেশি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। বাকি ১৪৭ আসনে প্রার্থী ছিলেন ৩৯০ জন, এর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ১০৪ জন। তারা প্রদত্ত ভোটের ১৫.০৬ শতাংশই পান; আসন জেতেন ১৬টি। এদের সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ভোটে অংশ নেন।
>> ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২৮ জন। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ১ হাজার ৮৬১ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান তিন আসনে। তবে তাদেরও দলীয় পরিচয় ছিল।
>> ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ২৯৯ আসনে প্রার্থী রয়েছেন ১৯৭০ জন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন ও ২৮টি নিবন্ধিত দলের ১৫৩৪ জন।