দুর্নীতি দমন কমিশনকে এই তথ্য জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান এই সংগঠনের সভাপতি।
Published : 04 Jul 2024, 11:59 PM
আমদানি নিষিদ্ধ গরু হিসেবে বিমানবন্দরে জব্দ আমেরিকার ব্রাহমা জাতের গরু কীভাবে সাদিক অ্যাগ্রোতে গেল, সে বিষয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের ব্যাখ্যা নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল।
মহাপরিচালক জানান, তারা গরুগুলোকে সাদিক অ্যাগ্রোর কাছে না, দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিডিএফএকে।
বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমনে কাজ করা সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল যায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে।
বুধবার সাদিক অ্যাগ্রোর মোহাম্মদপুরের খামার থেকে ৬টি ব্রাহমা জাতের গরু জব্দ করার কথা জানায় দুদক। এরপর গরুগুলোকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জিম্মায় রাখা হয়।
২০২১ সালের জুলাইয়ে কোভিডের বিধি-নিষেধের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আনা হয় ‘শাহিওয়াল’ জাতের কথা বলে।
সাদিক অ্যাগ্রো গবাদিপশু আমদানি-সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্রও জমা দিয়েছিল। তবে প্রতিটি নথিই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা।
ধরা পড়া গরুগুলোকে পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। গত রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরুগুলো জবাই করে বিক্রির দায়িত্ব নেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায় সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে।
ঈদের আগে ঢাকার একটি প্রদর্শনীতে এই জাতের গরু তুলে একটি গরুর দাম এক কোটি টাকা চাওয়ার পর একে ‘বংশ মর্যাদাপূর্ণ গরু’ বলে ভাইরাল হন ইমরান। এরপর প্রশ্ন উঠে ব্রাহমা গরু তিনি কীভাবে পেলেন।
ইমরানের এই ঘটনাটি সামনে আসে একটি খাসির দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে। সেই খাসিটি ১২ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত। পরে প্রকাশ পায় তার বাবা এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান।
গরুর দাম কোটি টাকা, কারণ 'বংশমর্যাদা'
এই ঘটনায় ধীরে ধীরে মতিউর ও তার দুই স্ত্রী, সন্তান এবং আত্মীয় স্বজনের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান মেলে যা তাদের আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এই ঘটনায় মতিউর এনবিআরের পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ হারান। তিনি প্রকাশ্যেও আসছেন না।
পরে সাদিক অ্যাগ্রোর নানা অনিয়মগুলোও সামনে আসতে থাকে। খালের জমি দখল করে মোহাম্মদপুরে গড়ে তোলা একটি খামার পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হয়। সামনে আসে ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে অতীতের ‘জালিয়াতির’ তথ্য। জানা যায়, সরকারি সংস্থা জব্দ করার পর গরুগুলো তাদেরকে দিয়েছিল রোজায় কেটে বিক্রি করার জন্য।
সাদিক অ্যাগ্রোকে দেওয়া ব্রাহমা গরুগুলো জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এখন অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্রাহমা জাতের গরুগুলোকে বিমানবন্দরের কাস্টমসের জব্দ করা সংক্রান্ত আরও নথিপত্র বৃহস্পতিবার সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গরুগুলো কীভাবে সাদিক অ্যাগোর খামারে গেল, সে বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজির বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
“গত কয়েকদিনে এ বিষয়ে অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথি ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গরু আমরা সাদিক অ্যাগ্রোতে দেইনি, আমরা দিয়েছি বিডিএফএকে (বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন)।
“বিডিএফএ একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠন, মিডিয়াতে তাদের নিয়ে বড় ধরনের প্রচার প্রচারণা রয়েছে। তারা কতটুকু বৈধ-অবৈধ সেই বিবেচনায় আমরা যাইনি। আমরা তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক কোনো চুক্তিতে যাইনি। জনস্বার্থে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তারা সুলভ মূল্যে বিক্রি করতে চেয়েছে, আমরা তাদের অংশগ্রহণকে উৎসাহী করেছি, এর বেশি কিছু নয়।“
সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন খামারিদের সংগঠন বিডিএফএর সভাপতি।
দুদকের একটি দল গত মঙ্গলবার আমদানিকৃত নিষিদ্ধ গরুর তালিকাসহ এ সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস হাউজেও গিয়েছিল। সেখান থেকে তালিকা সংগ্রহের পরই মঙ্গলবার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোর খামারে অভিযান পরিচালনা হয়।
সোমবার সাদিক অ্যাগ্রোর কেরানীগঞ্জের খামার ও সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালায় দুদক। এই অভিযানেও অভিযানে সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে ব্রাহমা জাতের গরু ও প্রজননের নিষিদ্ধ ওষুধ আমদানি করার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।
আরও পড়ুন:
সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ৬টি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু জব্দ করেছে দুদক
সাদিক অ্যাগ্রোর খামার উচ্ছেদের পর খাল খনন শুরু
সাদিক অ্যাগ্রোর সেই খামারের পুরোটাই গুঁড়িয়ে দিল ডিএনসিসি
সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে দুদকের অভিযান
'ছাগলকাণ্ডে' আলোচিত খামার সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধ অংশ গুঁড়িয়ে দিল ড