বৃহস্পতিবার খালের জমি থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট পরে বলেছেন, খালের তীরেও স্থাপনা অবৈধ।
Published : 29 Jun 2024, 08:08 PM
খাল উদ্ধারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারের পুরোটাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই খামারের গরু-ছাগল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সাভারের খামারে।
শনিবার দুপুরে টানা তৃতীয় দিনের মতো মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ হাউজিং এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
বৃহস্পতিবার এই অভিযান শুরু হয়। সেদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেবল খালের ওপর থাকা স্থাপনা ভেঙে দিয়েছিলেন। এরপর টানা তিনদিন ধরে চলে অভিযান।
পুরো খামারটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা এবং খালের পাড় ঘেঁষে স্থাপনা গড়ার নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে।
অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ এবং ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান।
এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
মোতাকাব্বীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন দিনের অভিযানে প্রায় শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে এখন পর্যন্ত খালের বিপুল পরিমাণ জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। আর খালের কয়েকশ টন বর্জ্য পরিষ্কার করে বর্তমানে খাল খননের কাজ চলছে।”
প্রথমদিন সাদিক অ্যাগ্রোর স্থাপনার শুধু পেছনের অংশ ভাঙা হয়। সেদিন ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, সাদিক অ্যাগ্রোর পেছনের কিছু অংশ খালের (রামচন্দ্রপুর খাল) জায়গায় পড়েছে। পুরো স্থাপনা খালের জায়গায় পরেনি।
শুক্রবারও উচ্ছেদ অভিযান চলে, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ায় বিঘ্নিত হয় কার্যক্রম।
পুরো স্থাপনা ভাঙার কারণ জানতে ডিএনসিসি কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর বলেন, “খালের পাশে ও আবাসিক এলাকায় গরুর খামার রাখার নিয়ম নেই। আর তাদের ট্রেড লাইসেন্স ছিল না। সব কিছু মিলিয়ে উনাদের (সাদিক অ্যাগ্রো) অবৈধ স্থাপনাগুলো আমরা ভেঙে দিয়েছি। খালের উপর তো না-ই, এমনকি খালের পাড় ঘেঁষেও বাড়ি করা যাবে না, এটারও একটা নীতিমালা আছে। এই নীতিমালাও তারা অনুসরণ করেনি।
“এখানে খামার করেছে, সেটার ট্রেড লাইসেন্স নাই। তারা প্রথমদিনেই বলেছিল সবকিছু সরিয়ে নেবে, কিন্তু সরায়নি। তবে আজ বিকেলে আমি গিয়ে খামারে তাদের গরু পাইনি।”
খালের প্রশস্ত কোথাও ১০০ আবার কোথাও ১২০ ফুট পর্যন্ত ছিল বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেসব সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছিল বিভিন্ন মানুষজন সেসব উদ্ধার করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
তিনি বলেন, “খালের দুই পাশে নিয়মনীতি মেনে, রাজউকের অনুমতি নিয়ে যারা ভবন বা স্থাপনা করেছে সেসব রাখা হয়েছে। বাকিসব ভেঙে ফেলা হয়েছে।”
গত কয়েক বছর ধরেই মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো গরুর মাংসের বাজারে আলোচনায় আছে।
চলতি বছর কোটি টাকার দামের ‘বংশ মর্যাদাসম্পন্ন গরু’ ও ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়ার ঘটনায় শুরু হয় নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা।
সেই ছাগল ১২ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ।
১৯ বছরের তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার চুক্তির পর তার বাবা এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য আসে গণমাধ্যমে। এরপর মতিউরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি এখন লাপাত্তা। এরপর সাদিক অ্যাগ্রোর নানা অনিয়মের বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে গণমাধ্যমে।
সেই ঘটনায় প্রকাশ পায় ইফাতের বাবা এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান। তবে পিতৃ পরিচয় অস্বীকার করে মতিউর। কিন্তু তার এই দাবি অসত্য প্রমাণিত হয়।
এই ঘটনায় মতিউরের দুই স্ত্রী ও ছয় সন্তান এবং স্বজনদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির কথা প্রকাশ পায়। সামনে আসে সাদিক অ্যাগ্রোর নানা অনিয়মের বিষয়টি।
খামারটি খালের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি পুরনো তথ্য হলেও এতদিন সরকারি সংস্থা তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি।
তবে নতুন পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অভিযানে যাওয়ার খবর আগেভাগেই জানায় গণমাধ্যমকে।
এই উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
খামারটির মালিক ইমরান হোসেনকে ফোন করলে তিনি সাড়া দেনি।
গবাদিপশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি গত বৃহস্পতিবারের উচ্ছেদ অভিযানেও ছিলেন না।
খামারটির ইনচার্জ সুমন খান সেদিন বলেছিলেন, তারা জমি ইজারা নিয়ে খামারটি গড়েছেন। এখানে তাদের দায় নেই।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হচ্ছে মোহাম্মদপুরেই আরও একটি খাল দখল করে সাদিক অ্যাগ্রোর আরও একটি খামার আছে। সে বিষয়ে সরকারি কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।