বিক্ষোভকারীরা আগের দাবিতে অটল থেকে সড়কে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন।
Published : 14 Nov 2024, 01:25 AM
সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখা বিক্ষোভকারীরা সরকারের অন্তত চার উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার রাত ১টাতেও হাসপাতালে ফিরে না গিয়ে আহতরা শ্যামলী-আগারগাঁও সড়কে অবস্থান করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় কথা বলেও তাদের সেখান থেকে সরাতে রাজি করাতে পারেননি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
কোটা সংস্কার ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় আন্দোলনে আহত এসব ব্যক্তিদের দাবি, সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদকে সেখানে আসতে হবে।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ তাদের বলেন, উপদেষ্টা আসিফ ও নাহিদ এই মুহূর্তে ঢাকায় নেই। সকলের সঙ্গে বসতে হলে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার আগে সম্ভব নয়। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুল রহমানের তার সঙ্গে আলোচনা করতে আসার প্রস্তাব দেন। বিক্ষোভকারীরা তার সঙ্গে কথা বলতে চান কি না সেটি জানতে চান।
তবে বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দেন, তাদের দাবি অনুযায়ী চার উপদেষ্টার সঙ্গে বসতে চান। এজন্য প্রয়োজন হলে তারা বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এখানেই বসে থাকবেন বলে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।
তখন হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আপনারা যে সিদ্ধান্তই নেন আমরা কিন্তু আপনাদের পাশে আছি। আমরা কিন্তু সরকারের অংশ না। আমরা আপনাদের ভাই। সারজিসের ডেঙ্গু হয়েছে, সে কারণে সে আসতে পারেনি। অন্য যারা আছেন তারা কিন্তু এসেছেন।
“আমাদের বলা হচ্ছে কিংস পার্টি। আমি বলতে চাই আমরা হলাম কিংস মেকার। আমরা তাদের বানিয়েছি।”
এরপর বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে একজন বলেন, “আমরা যাদের কিং বানালাম তারা কি একবারের জন্য আমাদের দেখতে আসতে পারে না। আমাদের নিজের টাকা দিয়ে আহত ভাইয়ের জন্য রক্ত কিনতে হয়।”
গুরুতর অসুস্থ একজনের কথা তুলে ধরে ওই বিক্ষোভকারী বলেন, “আমাদের এক ভাই এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। বিদেশি ডাক্তাররা এসে তার অপারেশন করেছিল। এখন বলা হচ্ছে বিদেশি ডাক্তারদের অবহেলায় তার হাত কেটে ফেলতে হবে, তার অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা এসবের সুরাহা চাই।”
এ অবস্থায় দুপুরের পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে জুলাই-অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় সব আহতদের দেখতে না যাওয়ায় তিনি বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তারা উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেন।
কিছু সময় পর উপদেষ্টা ওই হাসপাতাল ত্যাগ করলে বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শ্যামলী থেকে আগারগাঁও যাওয়ার সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন।
সেসময় বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল উপদেষ্টা এবং সমন্বয়করা এসে দাবি মেনে নিলে রাস্তা ছাড়বেন তারা।
উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর তারা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক বরাবর রাস্তাটির দুই পাশ আটকে দেয়। রাস্তার উপর হুইল চেয়ার ক্রাচ হাতে কয়েকজন আহতকে বসে থাকতে দেখা যায়।
একাধিকবার তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও তারা উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন। তাদের দাবির বিষয়েও তারা বিবৃতি দেবেন না বলে জানান।
দুই একজন এদিক-ওদিক দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মূল জমায়াতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে রাত ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে এসে কথা বলার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। তবে আন্দোলনকারীরা তার কাছেও দাবি দাওয়া তুলে ধরতে চাননি। তখনও আন্দোলনকারীদের তিনি সেখান থেকে সরে যেতে রাজী করাতে পারেননি।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন’ এর প্রধান নির্বাহী আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন।
তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের হৈ চৈ এর মুখে স্নিগ্ধ কথা শেষ করতে পারেননি। বারবারই তাকে থেমে যেতে হয়।
আন্দোলনকারীরা উল্টো স্নিগ্ধকে তাদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে অনুরোধ করেন।