সড়ক আটকে রাখা আন্দোলনকারীরা বলছেন, “সাড়ে তিন মাস ধইরা ওরা আমাগো ঘুরাইতেছে। সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করতাছে না। উপদেষ্টা এইখানে না আসা পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ুম না।"
Published : 13 Nov 2024, 08:24 PM
প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে রাজধানীর শ্যামলীতে শিশু মেলা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ আটকে বিক্ষোভ চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি তুলে আহতদের সঙ্গে আরও কিছু লোকজন সড়কটি আটকে রেখেছেন। এতে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিস ফেরত মানুষ।
এসময় ওই সড়ক ধরে কেউ অনুরোধ করে যেতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, “সাড়ে তিন মাস ধইরা ওরা আমাগো ঘুরাইতেছে। সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করতাছে না। উপদেষ্টা এইখানে না আসা পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ুম না।"
বুধবার দুপুরের পর থেকে অফিস ফেরতের এসময় আগারগাঁও ও মিরপুর রোডের মধ্যে সংযোগকারী এ সড়ক আটকে থাকায় দীর্ঘ যানজটে দুই পাশে ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য মানুষ। পাশাপাশি অন্তত ছয়টি সরকারি হাসপাতাল থাকায় রোগীদের অনবরত আসা যাওয়া করতে হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে যেতে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের হৈ চৈ এর মুখে স্নিগ্ধ কথা শেষ করতে পারেননি। বারবারই তাকে থেমে যেতে হয়।
আন্দোলনকারীরা স্নিগ্ধকে তাদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে অনুরোধ করেন। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্নিগ্ধ সেখানেই ছিলেন।
রাস্তা আটকে এ বিক্ষোভের শুরু হয়েছিল বুধবার দুপুরে। দুপুরবেলায় সরকার পতনের আন্দোলনের সময় আহতদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল) আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক আহতকে তিনি না দেখেই চলে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ তুলে দুপুর থেকে রাস্তা আটকে দেয় আন্দোলনে আহত কয়েকজন ও তাদের সহযোগীরা। এসময় অনেকে তার গাড়ির সামনে বসে পড়েন, অনেকে আবার গাড়ির ওপরে উঠে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর তারা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক বরাবর রাস্তাটির দুই পাশ আটকে দেয়। রাস্তার উপর হুইল চেয়ার ক্রাচ হাতে কয়েকজন আহতকে বসে থাকতে দেখা যায়।
একাধিকবার তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও তারা উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন। তাদের দাবির বিষয়েও তারা বিবৃতি দেবেন না বলে জানান। দুই একজন এদিক-ওদিক দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মূল জমায়াতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
খায়রুল নামে একজন বলেন, “আমাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। এ কারণে আমরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।”
সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ খায়রুলের পায়ের গোড়ালির উপরে গুলি লেগেছিল বলে জানানি তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর এখনও তিনি ভালো করে হাঁটতে পারছেন না। আরও ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন বলে দাবি তার।
সড়কে তাদের অবস্থানের মধ্যে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি জিয়াউল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক দল সেখানে অবস্থান করছেন।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কিছু উৎসাহী রিকশাচালক ও আশপাশের বস্তির শিশু- কিশোররাও যোগ দিয়েছেন। তারা কোনো গাড়ি রাস্তা দিয়ে যেতে দিচ্ছেন না। কোনো মোটরসাইকেল বা রিকশাচালক অনুরোধ করে রাস্তার ওপারে যেতে চাইলে তাদের দিকে লাঠি হাতে তেড়ে আসছেন বিক্ষোভকারীরা।
এসময় বাংলাদেশ বেতারের কর্মী পরিচয় দেওয়া এক মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে তাদের ঝগড়া লেগে যায়। ওই ব্যক্তি বলছিলেন, "কয়েক হাত দূরে আমার অফিস, আমি যামু কেমনে? আমার একটু যাইতে দেন।"
এসময় বিক্ষোভকারীরা বলছিলেন, "আমরা সাড়ে তিন মাস ধরে কষ্ট করতাছি। আমাগো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেছে না। উপদেষ্টা আইসা আমাগো না দেইখা চইলা যায়। আমরা গুলি খাইছি অথচ তিন মাস যাইতে না যাইতেই আমাগো কোনো দাম নাই। আমরা কষ্ট করতাছি আপনারাও একটু কষ্ট করেন।"
আরও অনেককে একইভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু যানজটে নাকাল মানুষ কোনো দিকে যেতে না পেরে বিরক্তি প্রকাশ করে বিকল্পে পথেরে খোঁজে চলে যায়। অন্যদের যানজটেই আটকে থাকতে হয়।