“ট্রাইব্যুনালের নাম পরিবর্তন করা উচিত, যাতে এটি আগের স্বৈরাচারী শাসনের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে,” প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ উপদেষ্টা।
Published : 07 Mar 2025, 12:03 AM
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ‘গণহত্যার’ অভিযোগের মামলাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান।
বৃহস্পতিবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এ পরামর্শ দেন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশ কীভাবে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে কাজ করতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সাক্ষাতে তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা, আইসিসির দায়িত্ব ও ভূমিকা, বাংলাদেশের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন।
“কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তি বিদেশে আশ্রয় পেয়েছে, যা বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা হলে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে,” আলোচনায় এ বিষয়ও উঠে এসেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ক্যাডম্যান বসনিয়া, কসোভো, রুয়ান্ডা, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের মামলায় কাজ করেছেন।
সাক্ষাতে আইনি কাঠামোতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে ক্যাডম্যান প্রধান উপদেষ্টাকে ট্রাইব্যুনালের নাম বদলের প্রস্তাব দেন। বলেন, “ট্রাইব্যুনালের নাম পরিবর্তন করা উচিত, যাতে এটি আগের স্বৈরাচারী শাসনের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এছাড়া মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণের নিয়ম সংশোধন করে ন্যায়বিচার ও যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তারা আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় লন্ডনভিত্তিক গার্নিকা ৩৭ ল ফার্মের যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যানকে।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা। তখন থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।
দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লীগ প্রধানের বিরুদ্ধে কয়েকশত মামলা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালেও তার বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগও জমা পড়েছে। এর মধ্যে ‘গণহত্যার’ দুটি অভিযোগে হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে টবি ক্যাডম্যানের সাক্ষাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বর্তমান অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস আইসিটি প্রসিকিউশন দলের কাজের প্রশংসা করে বলেন, “ন্যায্য বিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, গত মাসে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশ শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে যে, এই মামলাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো হবে কি না।
"বিশ্বের জানা দরকার, জুলাইয়ের গণআন্দোলনের সময় ১,৪০০ শিক্ষার্থী, বিক্ষোভকারী ও শ্রমিক হত্যার আদেশ কে দিয়েছিল এবং কারা ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন (শেখ হাসিনার) শাসনের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন করেছে। এখন আমাদের কাজ অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।"
এ বৈঠকে কীভাবে ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশনের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ করা যায়, যাতে সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়, অভিযুক্তদের ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা যায় এবং বিচারিক প্রক্রিয়া জনগণের কাছে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার ও দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি ও প্রক্রিয়াগত দিকগুলো নিয়েও তারা কথা বলেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধান উপদেষ্টা ক্যাডম্যানকে ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ: গ্রাফিতি অব বাংলাদেশ’স নিউ ডন’ বই উপহার দেন।
হাসিনার প্রত্যর্পণে ভারত ন্যায় বিচারের পক্ষে দাঁড়াবে, আশা ক্যাডম
ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে, আশা টবি ক্যাডম্যানের
ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শকের দায়িত্বে টবি