ভোটের মাঠে গুজব আসতে পারে ‘দুইভাবে’, সতর্ক করলেন জননিরাপত্তা সচিব

যে কোনো ধরনের গুজবের বিষয়ে সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অবহিত করার কথা বলেছেন সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ভোটের দিন নানা ধরনের গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্বাহী হাকিমদের নির্দেশ দিয়েছেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেছেন, ফোন এবং সোশাল মিডিয়া- এ দুই মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনকারী কর্মকর্তাদের কাছে গুজব আসতে পারে বলে ‘তথ্য মিলেছে’।

সেরকম ক্ষেত্রে সময় নষ্ট না করে যে কোনো ধরনের গুজবের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ন সেলকে অবহিত করতে নির্বাহী হাকিমদের নির্দেশনা দেন সচিব।

মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাহী হকিমদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কথা বলছিলেন সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

ভোটের মাঠে আচরণবিধি প্রতিপালনে কাজ করা নির্বাহী হাকিমদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কিছু গুজব আসবে। আমাদের কাছে সেরকম তথ্য আছে। এই গুজবগুলো দুই ধরনের। একটা হচ্ছে ইন্সট্যান্ট ফোন আসবে আপনার কাছে। ‘ওই এলাকায় মার্ডার হয়েছে, পাঁচজন আটকে রাখছে- এদিকে মুভ করেন’।

“আরেকটা গুজব হচ্ছে-সাইবারভিত্তিক গুজব। এসব গুজব এলে জেলা প্রশাসক জানেন- কোথায় জানাতে হবে, সোশাল মিডিয়ায় আসা লিংকটা কার কাছে পাঠাতে হবে। এটা তাদেরকে ওয়েল সার্কুলেট করেছি, আবারও করব। কন্ট্রোল রুম বা আইন শৃঙ্খলা সমন্বয় সেলে জানাবেন। জেলা প্রশান সেল বা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিলে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারব।”

গুজব রোধে নেওয়া পরিকল্পনা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, “জেলা প্রশাসনকে বার্তা দেওয়া হবে যেন সিঙ্গেল চ্যানেলে নির্বাহী হাকিমদের সঙ্গে যোগ দেন। বাইরের গুজবের খবর এলে আপনি (নির্বাহী হাকিম) ক্রস চেক না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। প্রতিটি জেলায়, উপজেলায় কোর কমিটি রয়েছে। বাহিনী প্রধানদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে সমন্বয় সেল থাকবে। যাই ঘটুক তাদের কাছে তথ্য থাকবে। ক্রস চেক করে অ্যাকশনে যাবেন।“

নির্বাহী হাকিমদের উদ্দেশে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “পিআইডি, এনটিএমসির সেল রয়েছে, তারা এখন থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সার্বক্ষণিক কাজ করবে।”

ভোটের সময়ে সোশাল মিডিয়ার গুজব অনেক সময় ‘ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে’ মন্তব্য করে জননিরাপত্তা বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, “কিছু অপরিচিত ফোন এসে আপনাদের বিভ্রান্ত করবে, কেনো ইনটেনশন নিয়ে কথা বলবে। আপনাদেরকে দায়িত্বপ্রাপ্ত জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ফোনগুলো আসতে পারে। মিস লিড কেরতে পারে। এটা যাচাই করতে হবে। এছাড়া রিটার্নিং অফিসারের সিগন্যাল ছাড়া অনত্র যাবেন না।“

ভোটারদের যাতায়াত সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে ভোটের দিন গণপরিবহন, প্রাইভেটকার ও অটোরিকশা চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান।

এই সিনিয়র সচিব বলেন, “তবে আগের মত এবারও মোটরসাইকেল ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।“

নির্বাহী হাকিমদের এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, “উদ্দেশ্য একটাই। সেটি হল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। এর কোনো বিকল্প নেই। “

এই কমিশনারের ভাষ্য, কোনোমতেই এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না।

“যখন যেখানে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দরকার, সময়ক্ষেপণ না করে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পদক্ষেপ নিতে হবে। মাঠে আমাদের প্রায় তিন হাজার নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন। এ নির্বাচন শুধু ১৮ কোটি মানুষ দেখছে তা নয়, আমাদেরকে দেখছে সমগ্র বিশ্ব। আমরা কীভাবে নির্বাচন করব, কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, এইটা তারা মূল্যায়ন করবে।“

এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন বলেও জানান কমিশনার আনিছুর।

তিনি বলেন, "তারা কে কোথায় যাবেন, এটা তাদের ইচ্ছা, আমরা কাউকেই ইম্পোজ করব না যে আপনারা এখানে বা ওখানে যান। তারাই ঠিক করবেন কোথায় যাবেন, আমরা তাদের যাতায়াত ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।"

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থবিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খানসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন: সোশাল মিডিয়া কীভাবে সামলাবে ইসি?

ভোটে আরও ১৯০৪ জন নির্বাহী হাকিম চায় ইসি

ভোট শুধু সুষ্ঠু হলে চলবে না, সেটা বিশ্বাসযোগ্যও হতে হবে: সিইসি

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলায় নজর রাখতে ইসির সেল গঠন

ভোটের পথ ‘কুসুমাস্তীর্ণ’ নয়, উপলব্ধি সিইসির