“৩৫ এর পক্ষে যেমন আন্দোলন আছে, ৩৫ এর বিপক্ষেও আন্দোলন আছে। এটাকে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি,” বলেন রিজওয়ানা হাসান।
Published : 24 Oct 2024, 09:56 PM
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা শুধু দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন আন্দোলনকারীরা; আগের মতই তারা এ সীমা ৩৫ বছর করার দাবি তুলে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন।
তবে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন করা হবে না বলে সুষ্পষ্ট করে জানিয়েছেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাতে এসে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস বিফ্রিংয়ে রিজওয়ানা বলেন, “এ সিদ্ধান্ত আর পরিবর্তন করা হবে না। আন্দোলন তো হতেই পারে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা হতে পারে। এটার পক্ষে যেমন আন্দোলন আছে, ৩৫ এর পক্ষে যেমন আন্দোলন আছে, ৩৫ এর বিপক্ষেও আন্দোলন আছে। এটাকে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি।”
বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সভায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চাকরিবিধি পরিবর্তন করে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। তাতে একজন প্রার্থী তিনবারের বেশি সরকারি চাকরির এ নিয়োগ পরীক্ষা দিতে পারবেন না।
সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বয়সসীমা ৩৫-প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’। তাৎক্ষণিকভাবে স্থায়ীভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে।
পরে বিকালে ৩৫-প্রত্যাশীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটির সুপারিশ আমলে না নিয়ে চাকরিতে আবেদনের সময়সীমা ৩২ করার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এজন্য তিন দিনের সময়ও বেঁধে দেয় তারা।
চাকরিতে বয়সসীমা ৩২ করার সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল দাবি করে চাকরি প্রত্যাশী সানিয়া সুমি বলেন, “আপনারা যদি নিজেরাই এটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাহলে কেন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন? তাহলে তদন্ত কমিটি কি অযোগ্য ছিল? যদি তারা অযোগ্য হয়ে থাকে তাহলে আপনারা সেটা স্বীকার করুন।
“আর যদি আপনারা মনে করেন যে তারা যোগ্য ছিলো তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিন। তারা ৩৫/৩৭ এর যে প্রস্তাবনা দিয়েছলেন সেটা মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করুন।"
তীব্র আন্দোলন হলে এর দায়ভার সরকারের উপর পড়বে তুলে ধরে আরেক চাকরি প্রত্যাশী রেজোয়ানা বিন্দু বলেন, "আমরা সুষ্ঠু সমাধান চাই। আপনারা দাবি মেনে না নিলে ছাত্রসমাজ পুনরায় জেগে উঠবে। রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তখন এই দায়ভার আপনাদের ঘাড়েই পড়বে।"
সংবাদ সম্মেলনে দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন রোমান কবির নামের আরেকজন।
এদিকে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের অন্যতম মুখপাত্র খাদিজা খাতুন মুক্তাও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৫ চাই, এটি দীর্ঘ ১২ বছরের আন্দোলন। বর্তমান সরকার বয়সবৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিয়েছে সেজন্য সরকারকে সাধুবাদ।
”কিন্তু ৩২ এর প্রহসন কেন? সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস এর প্রহসন কেন? আমরা ছাত্র সমাজ তো ৩২ চাইনি? সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস চাইনি। যেখানে স্বাভাবিকভাবে ৩০ এর মধ্যে ৪/৫/৬ বার বিসিএস দিতে পারে শিক্ষার্থীরা সেখানে এত সংকোচন কেন? আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করছি।”
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘প্রহসন’ হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রাজপথে জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনবারের বেশি পরীক্ষার সুযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নে মুক্তা বলেন, "আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অনার্স শেষ হয় সাধারণত ২৪-২৫ বছরের মধ্যে। এবং পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২৩ বছরে সম্ভব। একজন শিক্ষার্থী যদি ২৩ বছরে অনার্স শেষ করে সে অনায়াসে ৩০ বছর পর্যন্ত সাতটা বিসিএসের সুযোগ পাচ্ছে।
“এটাতো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটার কোনো যৌক্তিকতা আমরা দেখি না।"
৩২ করার যে কারণ বললেন রিজওয়ানা
কীসের ভিত্তিতে উপদেষ্টা পরিষদ বয়স ৩২ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সভা শেষে বিফ্রিংয়ে তা তুলে ধরেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “যে যুক্তিগুলো দিয়ে বলা হচ্ছে বয়সসীমা ৩৫ করতে হবে; যেমন করোনা, আন্দোলন-সেগুলো আসলে অস্থায়ী কারণ। এগুলো কোনো স্থায়ী কারণ নয়, যেজন্য বড় কোনো চেইঞ্জে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত- আমরা দেখেছি-যেহেতু বিসিএসের প্রতি অনেকের আগ্রহ থাকে; এটা অনেক দূর বাড়িয়ে দিলে একইজন যদি বারবার এখানে পরীক্ষা দেয়, তাহলে অন্যদের জন্য সুযোগটা সীমিত হয়ে যেতে পারে।
“তৃতীয়ত এটার কিছু ফিন্যান্সিসিয়াল ইমপ্লিকেশন্স আছে। সব কিছু, সকলের অংশগ্রহণ, ফিন্যান্সিসিয়াল ইমপ্লিকেশন্স-এগুলো স্থায়ী ফ্যাক্টর। এগুলো চিন্তা করে আমরা বলেছি-আমাদের ৩২ রাখাটাই সমীচীন হবে।”
তিনি বলেন, “তিনবার মানে তিনবারই।”
অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হলে আইনি বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে বলে তুলে ধরেন তিনি।
আন্দোলনেও সিদ্ধান্ত আর না বদলানোর কথা তুলে ধরে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “যে কমিশন আমাদের রিপোর্ট দিয়েছে, আন্দোলনরত পক্ষকে শুনে দিয়েছে। আমাদের কাছে যখন এসেছে, আমরা এটার ইকনমিক ফিন্যান্সিসিয়াল ইমপ্লিকেশন টা ফর দ্য গভর্নেমেন্ট বুঝবার চেষ্টা করেছি। অন্যদিকে যারা আন্দোলন করছে তাদের কথাও বুঝবার চেষ্টা করেছি।
”সবটা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, এ মুহূর্তে ৩২ এর উপরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
অবসরের বয়সসীমা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়নি বলে তুলে ধরেনি উপদেষ্টা।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ল ২ বছর
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত হওয়া উচিৎ?
সরকারি চাকরিতে প্রবেশ: পুরুষের ৩৫, নারীর ৩৭ বছর করার সুপারিশ