“সকাল ৯টার মধ্যে প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ না দিলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
Published : 10 Aug 2024, 08:40 PM
আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতির সরে যাওয়ার পর মো. আশফাকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করার যে খবর চাউর হয়েছে তা আন্দোলনকারীদের ‘প্রত্যাখ্যানের’ মধ্যে জানা গেল ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগের তথ্যটি ‘বিভ্রান্তিকর’।
একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে শিক্ষা চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেছেন, “আমরা আগামীকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় দিলাম। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি হিসেবে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ না দিলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আপিল বিভাগের বিচারপতি আশফাককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি। এ ধরনের তথ্য প্রকাশে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।”
ক্ষমতার পালাবদলে এদিন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারক পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
তবে আপিল বিভাগের সাত বিচারকের মধ্যে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পদত্যাগ করবেন না বলে সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মকর্তা জানান।
তখন বিচারপতি আশফাকুল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন বলে খবর শোনা যায়। এমন খবর চাউর হওয়ার পর তাকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন শিক্ষা চত্বরে অবস্থানরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে হাই কোর্টের পাশে শিক্ষা চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
পরে সেখানকার অবস্থান ত্যাগ করার আগে সন্ধ্যা ৬টায় তারা রোববার সকাল ৯টার মধ্যে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি করার দাবি করেছেন তারা।
পরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হাই কোর্টের পাশে শিক্ষা চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানিয়ে সেখান থেকে সরে গেছেন তারা। আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার দিকে চলে আসেন।
এর আগে দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে হাই কোর্ট ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
পরে আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষা চত্বরের সামনে অবস্থান নেন তারা।
পদ ছাড়তে হল প্রধান বিচারপতিকেও
আপিল বিভাগের ৫ বিচারকের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত
এরই মধ্যে বিকেলে আপিল বিভাগের সাত বিচারকের মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পদত্যাগ করেননি।
শিক্ষা চত্বরের সমাবেশে বিচারপতি আশফাকুলকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার খবরের প্রসঙ্গ ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। আমরা জেনেছি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে মো. আশফাকুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, গত ১৫ বছর তিনি হাসিনাকে সার্ভ করেছেন। তাই আমরা এই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করছি।
"গত পনের বছর যে অত্যাচার হয়েছে, তিনি তার সহযোগী। আমাদের দাবি, তাকে সরিয়ে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করতে হবে।"
বাংলাদেশের তৃতীয় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুটি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে সৈয়দ রেফাত ২০০৩ সালে হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার দুই বছর পর স্থায়ী নিয়োগ পান।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, আজ যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। বিচার বিভাগীয় ক্যু করে, এই সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল খুনি হাসিনার নিয়োগকৃত বিচারপতি। আমরা খুনি হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছি, কিন্তু যদি এই বিচার ব্যবস্থাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, তাহলে আমাদের যেই ন্যায্যতার স্বপ্ন রয়েছে সেটি আমরা কখনোই প্রতিষ্ঠিত করতে পারব না।
"যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা হাই কোর্টকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারছি, ততক্ষণ আমরা রাজপথ ছাড়ব না।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার তিন দফা দাবি ঘোষণা করে বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগ পুনর্গঠন করতে হবে। হাসিনার পুলিশ প্রশাসন আমরা চাই না, পুলিশকে পুনর্গঠন করতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে নিরস্ত্র করে পুনর্গঠন করতে হবে, যে পুলিশ হবে জনতার পুলিশ।”