“আমরা চাই অন্তত চারজন উপদেষ্টা এখানে আসুন, আমাদের দুঃখ কষ্টের কথা শুনে যান,” দাবি তাদের।
Published : 13 Nov 2024, 10:20 PM
সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সামনে সড়ক অবরোধ করে রাখা বিক্ষোভকারীরা সরকারের অন্তত চার উপদেষ্টা না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘাতের মধ্যে আহত এসব ব্যক্তি বুধবার দুপুর থেকে শ্যামলী-আগারগাঁও সংযোগ সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন, যা রাত ১০টাতেও অব্যাহত ছিল।
রাত ৮টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর অনুরোধেও তারা রাস্তা ছাড়েননি।
বিক্ষোভকারীরা সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদকে সেখানে আসার দাবি জানিয়েছেন। তারা সেখানে না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে সরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন এসব আহত ব্যক্তি রাত ১০টার সময়েও সড়কে অবস্থান করছিলেন।
এর আগে রাত পৌনে ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ অবরোধ স্থলে এসে তাদের কর্মসূচি থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। তবে আহত ব্যক্তিরা উপদেষ্টাদের সেখানে উপস্থিত হওয়ার দাবিতে অটল থাকেন।
ঘণ্টা দেড়েক সেখানে থাকার পর হাসনাতকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা বলছেন, যাওয়ার সময় হাসনাত তাদেরকে বলেছেন তিনি উপদেষ্টাদের আনতে যাচ্ছেন।
এ অবস্থায় দুপুরের পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে জুলাই-অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম।
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ফিরে আসার সময় সব আহতদের দেখতে না যাওয়ায় তিনি বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তারা উপদেষ্টার গাড়ি আটকে দেন। পরে কিছু সময় উপদেষ্টা ওই হাসপাতাল ত্যাগ বেলা ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শ্যামলী থেকে আগারগাঁও যাওয়ার সড়কে অবস্থান নেন।
সেসময় বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল উপদেষ্টা এবং সমন্বয়করা এসে তাদের দাবি মেনে নিলে রাস্তা ছাড়বেন তারা।
উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর তারা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক বরাবর রাস্তাটির দুই পাশ আটকে দেয়। রাস্তার উপর হুইল চেয়ার ক্রাচ হাতে কয়েকজন আহতকে বসে থাকতে দেখা যায়।
একাধিকবার তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও তারা উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন। তাদের দাবির বিষয়েও তারা বিবৃতি দেবেন না বলে জানান। দুই একজন এদিক-ওদিক দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মূল জমায়াতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে রাত ৮টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে এসে কথা বলার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। তবে আন্দোলনকারীরা তার কাছেও দাবি দাওয়া তুলে ধরতে চাননি।
এসময় হাসনাত বলেন, “আন্দোলনে যারা চোখ, হাত-পা হারিয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব না। তাদের চিকিৎসা করতে না পারা এই সরকারের প্রথম ব্যর্থতা।”
আওয়ামী লীগ বিদেশে বসে সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতে শত শত কোটি টাকা খরচ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “৫ অগাস্টের পর অন্যদের জীবন যেমন সমন্বয়কদের জীবনও তেমন। কোনো পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু উপস্থাপন করা হচ্ছে সমন্বয়করা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে আমরা ধনীদের কাতারে চলে গেছি। আমাদের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে।”
আহতদের চিকিৎসার জন্য সমন্বয়করা সব সময় কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের বিদেশে পাঠানো, আহতদের অর্থ সহায়তা, কর্মসংস্থান, শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য তহবিল করে দেওয়া হয়েছে।”
তবে ’জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশনের’ অনেক সীমাবদ্ধতা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আহতদের জন্য টাকা নিতে গেলে ঘুরতে হয়, এই অফিস, ওই অফিস। নানা কিছু বোঝানো হয়।”
হাসনাত যখন কথা বলছিলেন তখন বিক্ষোভকারীদের হট্টগোল করে বেশ কয়েকবার তাকে থামিয়ে দেন।
বিক্ষোভকারীদের একজন তাকে বলেন, “আপনি নিজেও আহত। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন তাহলে আমাদের সঙ্গে বসে দাবিটা আদায় করে দেন।”
এসময় হাসনাত বলেন, “আপনাদের দাবিটা কী বলেন না।”
তখন বিক্ষোভকারীরা বলেন, “দাবি আমরা আপনার কাছে বলব না। এর আগে অনেকবার বলা হয়েছে। দাবি আপনার কাছে বলব না, যে দাবি পূরণ করবে তাকে বলব।”
বিক্ষোভকারীদের একজন মাইকে বলেন, “হাসনাত ভাই এখানে এসেছে আমরা খুবই কৃতজ্ঞ। কিন্তু এর আগে আমাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, সচিবালয়ের বৈঠক হয়েছে, নাহিদ ভাইয়ের বাসায় বৈঠক হয়েছে। এখন কি আমরা জাতিসংঘে যাব? সেটা তো আর আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
”আমরা চাই অন্তত চারজন উপদেষ্টা এখানে আসুন, আমাদের দুঃখ কষ্টের কথা শুনে যান।”
আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো আরেকজন বলেন, “এই সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে এই আহতদের আর কোথাও যাওয়ার কোনো জায়গা থাকবে না। তাদের ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসার যে টাকা পাওয়ার কথা তা এই সরকার না পেলে আর কখনো পাওয়া হবে না।”এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের হৈ চৈ এর মুখে স্নিগ্ধ কথা শেষ করতে পারেননি। বারবারই তাকে থেমে যেতে হয়।
আন্দোলনকারীরা উল্টো স্নিগ্ধকে তাদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে অনুরোধ করেন।