এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে।
Published : 10 Apr 2025, 10:01 AM
সারা দেশে ৩ হাজারের বেশি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয়েছে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা, যাতে অংশ নিচ্ছে ১১টি শিক্ষাবোর্ডের ১৯ লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এসএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র, দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষা এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে এ পরীক্ষা।
নির্দেশনা ছিল, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই ঢুকতে হবে কেন্দ্রে, তাই সকাল ৯টা থেকেই শুরু হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে ঢোকার প্রস্তুতি। সিট প্ল্যান দেখে নিজ নিজ আসনে বসে যায় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে আসেন অভিভাবকেরাও। তাই কেন্দ্রগুলোর সামনে ছিল অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড়।
রাজধানীর বাড্ডা হাই স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মাহামুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার মেয়ে মেরুল বাড্ডার সিরাজ মিয়া মেমোরিয়াল হাই স্কুলের ছাত্রী। সকাল সাড়ে ৯টার আগেই কেন্দ্রে পৌঁছেছি। বাংলা পরীক্ষা তাই টেনশন নেই।
"পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হলেও প্রস্তুতিতে এমন সমস্যা হয়নি। কারণ বাচ্চারা পূর্ণ সময় পেয়েছে।"
মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে কথা হয় আরেক অভিভাবক ফাতেমা আক্তার মুন্নীর সঙ্গে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমার মেয়ে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাই স্কুলের ইংরেজি ভার্সন থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। সকাল সাড়ে ৭টায় রামপুরার বাসা থেকে বের হয়েছি৷ পথে যানজট ছিল। শহীদবাগ মোড়ে পাক্কা ১৫ মিনিট বসে ছিলাম। আগেভাগে বের হওয়ায় সাড়ে ৯টার আগেই এসে পৌঁছেছি।"
ওই কেন্দ্রের সামনে আরেক অভিভাবক নাজনীন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সকাল সকাল বের হওয়ায় ৩০ মিনিট আগেই আসতে পেরেছি। খিলগাঁও রেলগেইটে খুব জ্যাম ছিল।"
তিনি বলেন, "আমার মেয়ে বাসাবো কদমতলা হাইস্কুল থেকে ইংরেজি ভার্সনে পরীক্ষা দিচ্ছে৷ প্রস্তুতি ভালো।"
শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার সকাল সাড়ে ১০টায় মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন।
• নয়টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন।
• মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় বসার কথা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জনের
• কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন।
গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর পর এটাই প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। চলতি বছর যে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসেছেন তারা ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমেই নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়েছেন।
তাদের পরের ব্যাচ, অর্থাৎ যারা আগামী বছর বা ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসবেন তারা নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে পড়ছেন। সরকারের পট পরিবর্তনের জেরে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল হওয়ার পর তারা দশম শ্রেণিতে পড়ছেন ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে তারা আগামী বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসবেন।
রেওয়াজ ছিল ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার। কোভিড ১৯ মহামারির জেরে তিন বছর ফেব্রুয়ারিতে এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হয়েছিল এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হল এপ্রিলে।
এবার এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ১৩ মে। ১৫ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে।
১৩ মে পর্যন্ত দাখিলের তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে। আর ১৪ থেকে ১৮ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে।
এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষা ১৩ মে ইংরেজি-২ পরীক্ষা দিয়ে শেষ হবে। ১৩ থেকে ২২ মে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের ব্যবহারিক পরীক্ষা এবং ২৩ মে থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত বাস্তব প্রশিক্ষণ চলবে।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নকল বা অসদুপায় অবলম্বন করলে এবং প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বা গুজব ছড়ানোতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো মোর্চ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০’, ‘তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬’ এবং ‘এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা ২০২৫’ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কমিটি জানিয়েছে।
‘সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত’ পরিবেশে পরীক্ষা আয়োজনে সব নাগরিকের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন ছাত্রী। ১৮০৮৪টি স্কুলের এসব পরীক্ষার্থী ২ হাজার ২৯১ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী দাখিল পরীক্ষায় বসছে। ৯ হাজার ৬৩টি মাদ্রাসার এসব পরীক্ষার্থী ৭২৫টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় বসেছেন ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
পরীক্ষা চলাকালে এবং পরীক্ষার আগেও পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
পরীক্ষা চলার তিন ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন এমন কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা চলার সময় কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে চলাচল করতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১৩ মে পর্যন্ত ৩৪ দিন সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্যদের মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন কেন্দ্র সচিব।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা ‘প্রোগ্রামেবল’ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ‘নন প্রোগ্রামেবল’ সায়েন্টিফেক ক্যাকুলেটর ব্যবহার করা যাবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে সকল ফটোকপি মেশিন পরীক্ষার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব উত্তরপত্র নিকটস্থ ডাক বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।