আদানির সঙ্গে করা চুক্তি প্রয়োজনে বাতিলের আহ্বান টিআইবির

“এই চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে অসম ও অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্বভাবে বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে,” বলছে টিআইবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2023, 02:35 PM
Updated : 17 Feb 2023, 02:35 PM

বছর পাঁচেক আগে ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার যে চুক্তি বাংলাদেশ করেছিল- সেটিকে ‘অসম, অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে তা পর্যালোচনার দাবি তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ-টিআইবি।

সংস্থাটি বলছে, এই চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা দেশের জনগণকে বইতে হবে। সে কারণে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তগুলো পুঙ্খানুপঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন এবং প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করা দরকার।

শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ মতামত দেন।

বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক রাখতে আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর চুক্তি করে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ। চুক্তির আওতায় আদানি ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় কয়লাভিত্তিক ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে আদানির কাছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাত ‘জিম্মি হতে পারে’ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, “শেয়ারবাজারে ফাঁকিবাজি এবং হিসাবপত্রে কারসাজি ও জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত আদানি গ্রুপের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে সম্পাদিত পিডিবির এই চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে অসম ও অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্বভাবে বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

“অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চুক্তিটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে আদানি গোষ্ঠীর স্বার্থকে এমনভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে যেতে পারে, যার বোঝা এ দেশের জনগণকে বইতে হবে।”

আগামী মার্চ থেকে আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরু হবে বলে চলতি মাসের শুরুতে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি আদানি পাওয়ারকে চিঠি লিখে বলেছে, চুক্তিতে প্রতি টন কয়লার দাম নির্ধারণ করেছে ৪০০ ডলার, যা আন্তর্জাতিক বাজার দরের তুলনায় বেশ বেশি। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম টন প্রতি ২৫০ মার্কিন ডলারের মত। সুতরাং চুক্তির কয়লার দাম পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ‘আদানি ওয়াচ’সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের বরাতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহৃত হবে তা আসবে আদানির মালিকানাধীন ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত খনি থেকে ও আদানির জাহাজে করে, যা খালাস হবে আদানির মালিকানাধীন বন্দরে এবং পরিবহন করা হবে আদানির মালিকানাধীন রেলে করে। আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবহন করা হবে আদানিরই নির্মিত সঞ্চালন লাইনে।

“আরও জানা যাচ্ছে জ্বালানি খরচসহ এই পুরো প্রক্রিয়ার ব্যয় বইতে হবে বাংলাদেশকে, যা বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতায় অভূতপূর্ব। ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য দেশের অন্য যে কোনো সরবরাহকারী থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি হারে মূল্য দিতে হবে।”

Also Read: আদানির বিদ্যুৎ: ভারত সরকারের ভূমিকা কী? ব্যাখ্যা দাবি তৃণমূল এমপির

Also Read: কয়লার দাম পর্যালোচনায় আদানিকে চিঠি বাংলাদেশের

Also Read: আদানির সঙ্গে চুক্তির ভাগ ‘কে পাচ্ছে’, পদযাত্রায় বিএনপির প্রশ্ন

এই ‘বৈষম্যমূলক’ চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারোর নেই মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “পিডিবি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকগণের প্রতি আমাদের আহ্বান, অনতিবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে এই সকল শর্তাবলী জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণপূর্বক সংশোধন করা হোক এবং দেশের ও জনগনের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনীয় এই চুক্তি বাতিল করা হোক।”

আদানির সঙ্গে করা ২৫ বছরের চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিটির ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকেই তা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও তা শুরু করা যায়নি।