“যারা টিকা নেবে, তাদের পাসপোর্ট নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য আমাদের এমআইএসের সিস্টেমে আপলোড করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটা এয়ারপোর্টে তারা শো করলে- সেখান থেকেও বিষয়টি দেখতে পারবে,” বলেন স্বাস্থ্যের ডিজি।
Published : 25 Jan 2025, 12:40 PM
ওমরাহ বা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিষেধক বাধ্যতামূলক করছে সৌদি আরব, সেই মেনিনজাইটিস টিকা ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংস্থার মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, টিকা সহজলভ্য করতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকার জন্য নির্দিষ্ট টিকাদানকেন্দ্র ঠিক করে দেওয়া হবে, যেখানে টাকা দিয়ে টিকা নেওয়া যাবে। টিকা গ্রহণকারীদের একটি সনদ দেবে সিভিল সার্জন অফিস। আর টিকাগ্রহণ সংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষণ করা হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখায়।
আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে যারা ওমরাহ করতে বা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাবেন, তাদের জন্য মেনিনজাইটিসের টিকা বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে সৌদি আরবে কাজের জন্য যাওয়া কর্মীদের এই টিকা লাগবে না।
গত সপ্তাহে ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে টিকা নিতে যান সৌদি গমনেচ্ছুরা। টিকা না পেয়ে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।
অধ্যাপক আবু জাফর শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই মুহূর্তে বাজারে ৮ হাজারের মতো টিকা আছে। আরও টিকা সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে। ফলে মেনিনজাইটিস টিকার কোনো সংকট থাকবে না। আমরা বিনা মূল্যে টিকা দেব না, টিকা কিনতে হবে বেসরকারি পর্যায় থেকে।
“আমরা একটা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি; তারা জানিয়েছে- তাদের স্টকে ৪০ হাজার টিকা আছে। মার্চের মধ্যে তারা আরও ৯০ হাজার টিকা উৎপাদন করবে হজযাত্রীদের জন্য। তাদের মাসে ৪০ হাজার উৎপাদন করতে পারে। এছাড়া আরও কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গেও আমরা কথা বলছি, তারা বাইরে থেকেও আনে, উৎপাদন করে দেশেও। সো টিকার কোনো ঘাটতি নাই।”
স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক জাফর বলেন, বিভিন্ন এলাকায় হাসপাতাল-ক্লিনিকে মেনিনজাইটিস টিকা পাওয়া যাবে। এই কেন্দ্র ঠিক করে দেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকা নিলে সেই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যভান্ডারে যুক্ত হবে।
“যারা টিকা নেবে, তাদের পাসপোর্ট নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য আমাদের এমআইএসের সিস্টেমে আপলোড করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটা এয়ারপোর্টে তারা শো করলে- সেখান থেকেও বিষয়টি দেখতে পারবে। এই অটোমেশনের কাজটি জানুয়ারির মধ্যেই আমরা ঠিক করে ফেলব আশা করি। আর টিকা নেওয়ার পর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে একটা সনদও দেওয়া হবে।”
ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ইনসেপ্টা গত বুধবার জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির তৈরি করা মেনিনজাইটিসের ‘ইনগোভ্যাক্স’ ঢাকার ল্যাবএইড, প্রাভা হেলথ, বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগ, প্রিভেন্টাসহ অন্যান্য টিকাদান কেন্দ্রে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলার টিকাদান কেন্দ্রেও এই টিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মেনিনজাইটিস মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের চারপাশের টিস্যুর প্রদাহজনিত সমস্যা। মেনিনজাইটিস যেকোনো বয়সী মানুষেরই হতে পারে। সাধারণত সংক্রমণের কারণে মেনিনজাইটিস হয়ে থাকে। রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন ওতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, আলো ও শব্দ অসহনশীলতা, খিঁচুনি ও মুখ দিয়ে শ্লেষ্মা বের হওয়া, অসংলগ্নতা, বমি বা বমিভাব। শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো হলো, জ্বর, খিটখিটে মেজাজ, খেতে অনীহা, অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং ত্বকে লাল দানা।
মেনিনজাইটিস বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীর কারণে হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ থেকে মানুষে এই সংক্রমণ ছড়ায়। এছড়া আঘাত, ক্যান্সার এবং ওষুধের কারণেও এ রোগের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস হল সবচেয়ে বিপজ্জনক, সংক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ব্যাকটেরিয়া মেনিনজাইটিসের বিরুদ্ধে সর্বোত্তম সুরক্ষা ব্যবস্থা হলো এর টিকা নেওয়া।