আওয়ামী লীগ মনে করে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি ‘একটি জঘন্য ও ঘৃণ্যতম কালো অধ্যায়’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
Published : 01 Dec 2024, 09:07 PM
দুই দশক আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার মামলায় হাই কোর্টের রায়ে আসামিদের সবাইকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত দলটি।
রোববার আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পাতায় রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, “একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত সকল আসামিকে সংবিধান, আইন ও সকল বিচারিক রীতিনীতি লংঘন করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে খালাস করে বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
“বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনে করে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি একটি জঘন্য ও ঘৃণ্যতম কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আসামিদের সবাইকে রোববার খালাস দিয়েছে হাই কোর্ট।
আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।
জজ আদালত এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল।
অভিযোগ গঠনে ত্রুটিকে আসামিদের সবাইকে খালাস দেওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে হাই কোর্ট বেঞ্চ।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, মুফতি আব্দুল হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে যে সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিল, সেই অভিযোগপত্রই ছিল ‘অবৈধ’।
এ ছাড়া কোনো সাক্ষী কোনো আসামিকে গ্রেনেড ছুড়তে দেখেননি, তাই শুধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া যায় না বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে কোর্ট।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র সরকারপ্রধান, যিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ছেড়ে পালানোর পথ বেছে নিয়েছেন।
শেখ হাসিনার মত আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়েছেন বলে খবর আছে। কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিরা আছেন আত্মগোপনে।
আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনায় কয়েক ডজন হত্যা মামলা হয়েছে গত দুই মাসে। এর অনেকগুলোতেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর প্রায় চার মাসে মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় দেখা গেছে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাকর্মীদের। নানা ইস্যুতে কখনও দলের নামে, কখনও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় বিবৃতিও দিয়ে আসছে দলটি।
‘একুশে আগস্ট মামলার সকল আসামিকে খালাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ’ শিরোনামে রোববারের বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে পবিত্র সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
“আজ একুশে আগস্ট মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত ৪৯ জন আসামির সকলকে খালাস করে এই অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার পবিত্র সংবিধানের ওপর কুঠারাঘাত করল।”
মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “আওয়ামী লীগ এটি স্মরণ করিয়ে দিতে চায়, ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্দেশে তদানীন্তন পুলিশ এই মামলা গ্রহণ করেনি। এই ভয়ানক গ্রেনেড হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধের হীন উদ্দেশ্যে তারা জজ মিয়ার নাটক সাজিয়েছিল।
“পরবর্তীতে এক এগারোর সরকারের সময় ২০০৭ সালে এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) তদন্ত নতুনভাবে শুরু করে। এক এগারোর সরকারের দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালে তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।”
অভিযোগপত্রের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ বলছে, “শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালানো হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে বিচারিক আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে গ্রেনেড হামলাকারী খুনি, এই হত্যাকাণ্ড ও হামলার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশ দাতাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ ক্রমে বিচার সম্পন্ন করে।
“আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আদালত দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর ন্যায় বিচারের সকল আইনি, বিচারিক বিধি বিধান ও রীতিনীতি প্রতিপালন করে এই মামলার বিচার সম্পন্ন করে। অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে হাইকোর্টের একটি বিভাগ সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে বিচারিক আদালতের রায় উদ্ভূত ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে একুশে আগস্ট নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও গ্রেনেড হামলার বিচার বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এই প্রহসনমূলক রায় দেয়।”
হাই কোর্ট বেঞ্চ ‘প্রহসনমূলক ফরমায়েশি রায়’ দিয়েছে অভিযোগ করে বেঞ্চের একজন বিচারকের সঙ্গে বিএনপির ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ থাকার অভিযোগ এনেছে আওয়ামী লীগ।
বিবৃতিতে বলা হয়, “৫ আগস্টের পর দেশের বিচার বিভাগ ধ্বংসসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও খাত ধ্বংস করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, আজ একুশে আগস্ট মামলার রায় বাতিল করে সেটিই প্রমাণ করা হয়েছে।”
আওয়ামী লীগ বলেছে, “অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাবো, দেশ ধ্বংসের যে উন্মত্ত খেলায় আপনারা মেতে উঠেছেন সেগুলো এখনই বন্ধ করুন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা এই সংবিধান আপনাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।”
আরও পড়ুন