উল্টো সৈয়দ জামিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা প্রটোকল তোয়াক্কা না করার অভিযোগ তুলেছে মন্ত্রণালয়।
Published : 03 Mar 2025, 01:59 AM
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া সৈয়দ জামিল আহমেদ ‘অযাচিত’ হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ তুলেছেন, সেটাকে ‘অসত্য, মনগড়া ও ব্যক্তিগত আক্রমণ’ বলে দাবি করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রোববার রাতে মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় শিল্পকলা একাডেমির কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করেনি। মন্ত্রণালয় একাডেমির কোনো কাজ বন্ধ করতে বলেছে, এমন নজির নেই।”
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় মহাপরিচালকের পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন সৈয়দ জামিল।
সেখানে ‘আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ তুলে শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের হাতে পদত্যাগপত্র দেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাতে দর্শকদের কেউ কেউ জামিল আহমেদকে ঘিরে ধরে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানান।
সেখানে জামিল আহমেদ তার কাজে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন। ‘চিঠি ছাড়াই টাকার জন্য চাপ’ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টার বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শনিবার ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, জামিল আহমেদের অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারার হতাশা থেকে আসা।
এর মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা এল। তবে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার বিষয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি; ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
এর আগে শুক্রবার রাতে সৈয়দ জামিল পদত্যাগের পর একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, একটি ভিডিও নির্মাণের জন্য কোনো লিখিত চিঠিপত্র ছাড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ‘টাকা প্রদানের চাপ’দেওয়া হয়। তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন শিল্পকলার মহাপরিচালক।
এ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, “চিঠিপত্র ছাড়া টাকা প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের বক্তব্য বা অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও বানানো।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এমনভাবে বিষয়টির অবতারণা করেছেন, প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে উপদেষ্টা তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য কোনো অনৈতিক টাকা দাবি করেছেন।
“শিল্পকলার মহাপরিচালকের এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মিথ্যাচার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি অসম্মান দেখানোর শামিল।”
প্রত্যাশিত বাজেট না পাওয়া নিয়ে সৈয়দ জামিল আহমেদ যে অভিযোগ করেছেন, তার ব্যাখ্যায় মন্ত্রণালয় বলছে, জুলাই বিপ্লবের পর শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত বরাদ্দের বাইরেও সংস্কৃতি উপদেষ্টা ব্যক্তিগত আগ্রহে সাধুমেলাসহ নানা অনুষ্ঠানে বিশেষ বরাদ্দ দেন।
“এছাড়া আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পকলা একাডেমির জন্য চলতি বছরের চেয়েও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাই অপর্যাপ্ত বাজেট বিষয়ে সৈয়দ জামিলের অভিযোগ নিতান্তই অমূলক ও প্রশাসনিক অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।”
সৈয়দ জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা প্রটোকলের তোয়াক্কা না করার অভিযোগ তুলেছে মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানের ফাইনাল রিহার্সাল ছিল। সেদিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও আবহ সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রিহার্সালে আসতে না দিয়ে মিটিংয়ের নামে আটকে রাখেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। ওই মিটিং তিনি সকালে বা পরের দিন বিকালেও করতে পারতেন।
আগের খবর...
শিল্পকলার স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত ও জামিল আহমেদকে ফেরানোর দাবি
স্বায়ত্তশাসন নামেই, 'মন্ত্রণালয়ের দাদাগিরি' কী চলবেই?
জামিল আহমেদের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন ফারুকী
প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে পদত্যাগপত্র, চার শর্ত মানলে ফিরবেন জামিল আহমেদ