ঝড়ের মধ্যে কক্সবাজারে দুইজনের মৃত্যুর খবর এসেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাছপালা, কাঁচাঘর
Published : 24 Oct 2023, 07:54 PM
পৌনে তিন লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ার পর পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপ ধাপে ধাপে শক্তি বাড়িয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেয়েছে।
সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পাওয়ার পর এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্রের নাম দেওয়া হয় ‘হামুন’। সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়। হামুন নামটি নেওয়া হয়েছে ইরানের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে।
এ ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলের দিকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
তখন প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, বিকাল ৩টা পর্যন্ত আগের ৬ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছিল।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় হামুন আরো পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি নিয়ে মঙ্গলবার রাত নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ০৯টা নাগাদ উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪8-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর চট্টগ্রামের দক্ষিণ অংশ দিয়ে উপকূলে উঠে আসতে পারে এ ঘূর্ণিঝড়।
আর জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হামুনের অগ্রভাগ উপকূলের কাছে পৌঁছে যাবে। যার অর্থ তখন থেকে ঝড়ের ধাক্কা শুরু হবে, যা পুরো ঝড় উপকূলে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত চলবে। এ ঝড় উপকূল অতিক্রম করবে চট্টগ্রামের দক্ষিণে কক্সবাজার ঘেঁষে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এখন অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি ধারণ করলেও উপকূল অতিক্রম করার আগে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকবে হামুন।
উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে হতে ক্রমান্বয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং তারপর ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পাবে এই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র।
উপকূল অতিক্রম করার সময় বাতাসের গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
জয়েন্ট তাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের কেন্দ্রভাগ বা চোখ যখন স্থলভাগে পৌঁছাবে তখন এ ঝড়ে বাতাসের গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের মত, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
গত মে মাসে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশে আঘাত হানে। মোখার তুলনায় হামুনকে অনেকটা দুর্বল বলছেন বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।
তিনিও বলছেন, উপকূল অতিক্রমের সময়ে হামুনের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার।
উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় তৈরি হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি সঞ্চয়ের তেমন সময় ও সুযোগ পাচ্ছে না জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামুন যত এগুবে তত শক্তি হারাবে। আঘাত হানার সময় তীব্রতা কমে ঘূর্ণিঝড় রূপে এটি উপকূল অতিক্রম করবে।”
তবে এখন পর্যন্ত যে প্রবণতা, তাতে ঝড়টি যাবে জনবহুল এলাকার ওপর দিয়ে, সে জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। তাতে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তারপর আরও অনেক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের মানুষ দেখলেও তত ক্ষতি আর হয়নি।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আগের মতই ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেলে আবহাওয়া অফিস।
কক্সবাজার সমুদ্রব্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
পায়রা সমুদ্রব্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আর মোংলা সমুদ্রবন্দরকে আগের মতই ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস ব্যবস্থা অনুযায়ী, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত মাত্রার দিক দিয়ে সমান। বন্দরের কোন দিয়ে ঝড় যাবে তা বোঝাতেই সংখ্যার পার্থক্য করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিয়াঞ্চাল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
হামুনের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।
ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় হামুন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঝড়ের বর্ধিতাংশ স্থলভাগ স্পর্শ করে।
এর আগে হামুন অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেলেও উপকূলের কাছাকাছি এসে শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়।
ঝড়টি পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন আজিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “রাত ১২টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ বা কেন্দ্রভাগ উপকূল অতিক্রম
করা শুরু করবে এবং চলবে রাত ৩টা পর্যন্ত। আমরা কক্সবাজারে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার দমকা বাতাসের বেগ পেয়েছি।”
হামুনেরঅগ্রবর্তীঅংশেরপ্রভাবেউপকূলীয়এলাকায়দমকাবাঝড়োহাওয়াসহভারিথেকেঅতিভারীবর্ষণচলছে।
ছবি: জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার
ঘুর্ণিঝড় হামুনের কারণে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে বিমান ওঠানামায় কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ।
তিনি বলেন, “সকাল থেকেই বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক আছে।”
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুনের’ প্রভাবে দমকা হাওয়া শুরু হলে সতর্কতার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছে কক্সবাজারে। ফলে সন্ধ্যার থেকে অন্ধকার হয়ে পড়েছে পর্যটননগরী।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি জেলার অনেক অংশে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী গোলাম আহম্মদ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কক্সবাজারের সহকারী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রাত ৮টায় বলেন, “এখন প্রবল ঝড় বইছে। এই এলাকার সর্বত্র বিদ্যুত সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।”
পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা গোলাম আহম্মদ বলেন, ঝড়ের গতি বেশ। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ছে। এসব কারণে সাড়ে ৭টা থেকে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন বিদ্যুৎ সরররাহ বন্ধ রয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পিডিবির লাইনের বিদ্যুতও বন্ধ রাখা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন কক্সবাজার পরোপুরি অন্ধকারে।”
ঘূর্ণিঝড় 'হামুন' মোকাবিলায় দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফায়ার সার্ভিস বলেছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক ও সাবধান করছেন ফায়ার সার্ভিসের উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোর সদস্যরা।
চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে গণসংযোগ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার চালানো ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব, ঘূর্ণিঝড় সময়কালীন এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সকল কাজ সমন্বয় করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে সদর দপ্তর ঢাকায় খোলা হয়েছে মনিটরিং সেল।
"মনিটরিং সেল থেকে উপকূলবর্তী এলাকার সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস।"
দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সকল ফায়ার স্টেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সকলকে স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে রাখা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছেভ
দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি প্রতি ফায়ার স্টেশনে সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিম, প্রাথমিক চিকিৎসাকারী দল এবং একটি করে ওয়াটার রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বরে বা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন ১৬১৬৩ নম্বরে ফোন করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মোবাইল নম্বর ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯-এ ফোন করেও জরুরি সেবা গ্রহণ করা যাবে।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের বিপদ এড়াতে উপকূলীয় ১০ জেলার ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে এসব জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে।
সে সময় আবহাওয়া অফিস ধারণা দিয়েছিল, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে এ ঝড় উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সেজন্য মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল।
কিন্তু শেষ দিকে গতি বেড়ে যাওয়ায় হামুন উপকূলে আঘাত হেনেছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। শেষ পর্যন্ত কত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান দুপুরের ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমাদের মাঠপ্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা সেখানে কাজ করছেন। সেখানে রান্না করা খাবার ও সুপেয় পানি, শিশুদের খাবার ও গো-খাদ্য দেওয়ার জন্য আমরা এরই মধ্যে অর্থ বরাদ্দ করেছি। প্রতি জেলায় ২০ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন উপকূলীয় ১০টি জেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মঙ্গলবারের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর কারণে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা থেকেই সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা নদী বন্দরে এক নম্বর ও চাঁদপুরের পরে নদীতে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরেও পণ্য ওঠানামা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বন্দরের জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বর্হিনোঙ্গরে চলে যেতে বলা হয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর গতিপথ ঘুরে যাওয়ায় কয়েক জেলার মানুষকে আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়নি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার রাত ৯টায় বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ঘুরে যাওয়ার অনেক জেলার মানুষকে আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়নি। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কক্সবাজারের ৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৯৬৮ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আর চট্টগ্রামে ১২ হারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন।”
এছাড়া ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার আশ্রয়কেন্দ্রেও মানুষ উঠেছেন জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “সব মিলিয়ে ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। আরও কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠবেন বলে আমরা ধারণা করছি।”
উপকূলের দশটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করে এসব জেলার ১৫ লাখ মানুষকে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার।
সে সময় আবহাওয়া অফিস ধারণা দিয়েছিল, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে এ ঝড় উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সেজন্য মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল।
কিন্তু শেষ দিকে গতি বেড়ে যাওয়ায় হামুন উপকূলে আঘাত হানে সন্ধ্যা ছয়টায়, গতিপথ কিছুটা বদলে এ ঝড় চট্টগ্রামের দক্ষিণ অংশ ও কক্সবাজারের ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে।
আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার ও আশপাশের অঞ্চলে সন্ধ্যা থেকেই দমকা হাওয়া ও বজ্র বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ার খবর এসেছে। সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় হামুন। গতিপথ পরিবর্তন করে এটি কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম উপকূলে উঠে আসছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কক্সবাজারে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৈকতে পর্যটকদের সতর্ক করে মাইকিং চলে সকাল থেকেই। এ ছাড়া সৈকতে দায়িত্বরত লাইফ গার্ড কর্মীরাও পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে মাইকিং করেন।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ রাখা হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে। বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত যেসব ফ্লাইট ছিল, সেগুলো বাতিল করতে বলা হয়েছে।
আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি জসিম মাহমুদ জানান, উপজেলায় সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টা পর্যন্ত প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে। বিকাল ৪টা থেকে উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর গতিপথ ঘুরে যাওয়ায় কয়েক জেলার মানুষকে আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়নি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নয় জেলার এক লাখ ১৪ হাজার ৪৬৭ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
এরমধ্যে বরিশালে ৪ হাজার ৪০৩ জন, ভোলায় ২৫ হাজার ৭৫৫ জন, চট্টগ্রামে ৩৭ হাজার ১৯৭ জন, কক্সবাজারে ৪০ হাজার ১৬১ জন, ফেনীতে ২০৪ জন, বাগেরহাটে ৪২৬ জন, নোয়াখালীতে ২ হাজার ৭৫৩ জন, পটুয়াখালীতে ২ হাজার ৩৫০ জন এবং পিরোজপুরে ১ হাজার ৩১৮ জন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।
এছাড়া ৫ হাজার ৯৭৯টি গরু-মহিষ, ৩ হাজার ৩৭৫টি ছাগল ও ভেড়াসহ ৯ হাজার ৪৪৮টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ঘুরে যাওয়ার অনেক জেলার মানুষকে আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়নি। অনেক জেলায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সেখান থেকে চলে গেছেন।”
রাত সাড়ে ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত নয় জেলায় এক লাখ ১৪ হাজার ৪৬৭ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন বলে জানান মিজানুর রহমান।
উপকূলের দশটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করে এসব জেলার ১৫ লাখ মানুষকে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার।
দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছিলেন, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে এসব জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হবে।
সে সময় আবহাওয়া অফিস ধারণা দিয়েছিল, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে এ ঝড় উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সেজন্য মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল।
কিন্তু শেষ দিকে গতি বেড়ে যাওয়ায় হামুন উপকূলে আঘাত হানে সন্ধ্যা ছয়টায়, গতিপথ কিছুটা বদলে এ ঝড় চট্টগ্রামের দক্ষিণ অংশ ও কক্সবাজারের ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করে।
এখন পর্যন্ত যা খবর পাওয়া গেছে, তাতে ঘূর্ণিঝড় হামুন তাণ্ডব চালাচ্ছে মূলত কক্সবাজারে। সোশাল মিডিয়ায় আসা ছবিতে বিভিন্ন জায়গায় গাছ ও সাইনবোর্ড ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। জেলার বেশিরভাগ এলাকায় সন্ধ্যা থেকেই বিদ্যুৎ নেই।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবের মধ্যে কক্সবাজারে দেয়াল ও গাছ চাপা পড়ে দুই জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান মঙ্গল রাত ১২টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুজনের মধ্যে পৌর এলাকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে দেয়াল চাপায়। আর মহেশখালী উপজেলায় গাছচাপায় একজনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
কক্সবাজার পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়াল ধসে যার মৃত্যু হয়েছে, তার নাম আবদুল খালেক, বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর।
স্থানীয় কাউন্সিলর ওসমান সরওয়ার টিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ১০টার দিকে দেয়াল ধসে পড়েছিল। তাতে খালেক মারা যান।”
মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সির ডেইল গ্রামে মারা গেছেন হারাধন নামের এক ব্যক্তি। তিনি গাছ চাপা পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান।
চকরিয়া উপজেলার বদরখালীতে আসকর আলী নামের আরেকজন গাছচাপায় মারা গেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এলেও বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি জেলা প্রশাসক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরাও শুনেছি, তবে এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।”
একই কথা বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান।
রাত সোয়া ১২টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কক্সবাজারে দুইজন মারা গেছে, আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি। এদের মধ্যে একজন সদরে আরেকজন মহেশখালীতে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের নাম-পরিচয়ও পেয়েছে। আরেকজন মারা যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে আমরা নিশ্চিত না হয়ে বলতে পারছি না।”
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন' এর মূল অংশ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে আগামী ৪ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম শেষ করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর ‘খুবই উত্তাল’ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক এলাকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ চলছে। ভারি বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাগি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছে ঘণ্টায় ১০৪ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, রাত ৮টায় কক্সবাজারে বাতাসের ওই গতিবেগ রেকর্ড করা হয়।
কুতুবদিয়ার পাশ দিয়ে ঝড় অতিক্রম করার সময় পাশের উপজেলা মহেশখালীতেও ঝড়ের প্রভাব ছিল বেশ।
রাত ১২টা পর্যন্ত ১১ জেলার দুই লাখ ৭৩ হাজার ১৫২ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
এর মধ্যে ভোলায় ১ লাখ ৪ হাজার ৪৬২ জন, চট্টগ্রামে ১ লাখ ১১ হাজার ৮১৮ জন এবং কক্সবাজারে ৪০ হাজার ১৬১ জন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
এছাড়া বরিশালে ৪ হাজার ৪০৩ জন, ফেনীতে ১ হাজার ৫০ জন, ঝালকাঠিতে ৬১৭ জন, লহ্মীপুরে ১ হাজার ৪৪৮ জন, নোয়াখালীতে ৩ হাজার ৫৯৫ জন, পটুয়াখালীতে ২ হাজার ৩৫০ জন, পিরোজপুরে ১ হাজার ৬৮১ জন এবং বরগুনায় ১ হাজার ২০৭ জন গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
মানুষের পাশাপাশি ১১ হাজার ৪৬২টি গরু-মহিষ, ১৬ হাজার ৪৫৮টি ছাগল ও ভেড়াসহ ২৮ হাজার ৩৭৪টি গবাদিপশু আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
উপকূলের দশটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করে এসব জেলার ১৫ লাখ মানুষকে মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়ন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ঘুরে যাওয়ার অনেক জেলার মানুষকে আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়নি। অনেক জেলায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সেখান থেকে চলে গেছেন।
৮৩০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছিল জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ৮১৬টি মেডিকেল টিম চালু আছে।
ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানার সাত ঘণ্টা পর পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে এসেছে ঘূর্ণিঝড় হামুন। কক্সবাজারের ওপর তাণ্ডব চালাতে চালাতে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পরিণত হয়েছে স্থল নিম্নচাপে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগ স্পর্শ করে। পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসার পর রাত ১টার দিকে স্থল নিম্নচাপ আকারে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকায় অবস্থান করছিল এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামুন স্থলভাগের ভেতরে আরো অগ্রসর হবে এবং বৃষ্টি বরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকবে।
ঝড়ের বিপদ কমে আসায় সংকেত কমিয়ে এনেছে আবহাওয়া অফিস।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আর মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।