এসব ঘটনায় বিএনপিকেই দায়ী করে আসছে ক্ষমতাসীনরা। তবে রিজভীর দাবি, সরকারই এসব ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে।
Published : 19 Dec 2023, 07:50 PM
ঢাকায় সমাবেশ ভণ্ডুল হওয়ার পর বিএনপি ও সমমনারা যে হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছে, তার মধ্যে রেলে পাঁচটি বড় ধরনের নাশকতা দেখল বাংলাদেশ। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচজনের, রেলের কর্মীসহ আহত হয়েছে অনেকে।
পুরোপুরি পুড়ে গেছে রেলের সাতটি কোচ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও আটটি কোচ এবং একটি ইঞ্জিন। এছাড়া লাইনে আগুন দেওয়া, ফিসপ্লেট তুলে ফেলা, ককটেল বিস্ফোরণের বেশকিছু ঘটনার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশ’ ডেকেছিল বিএনপি। তবে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে সেই আয়োজন ভণ্ডুল হয়ে যায়। তারপর থেকেই বিএনপি ও সমমনারা হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে আসছে।
এর মধ্যে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন, যাতে ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রাখা হয়েছে। এ ভোট বর্জন করে বিএনপি রাজপথের আন্দোলনেই থাকতে চাইছে।
তবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির শুরু থেকেই বাস, ট্রাক, রেলসহ বিভিন্ন পরিবহন ও স্থাপনায় নাশকতার খবর আসছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের তথ্য বলছে, গত ১৬ নভেম্বর রাতে টাঙ্গাইল স্টেশনে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের কোচে আগুন দেওয়া হয়। ওই ট্রেনটি সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। ওই ঘটনায় ট্রেনের দুটি কোচ পুড়ে যায়।
দুই দিন বাদে ১৯ নভেম্বর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী স্টেশনে ট্রেনে থেমে থাকা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় দুটি কোচ পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও একটি কোচ।
২২ নভেম্বর রাতে সিলেট রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কোচে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনা ঘটে রাত ৯টার দিকে, রাত ১১টায় ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা, ফলে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ট্রেনে নাশকতা নতুন মাত্রা পায় ১৩ ডিসেম্বর। সেদিন রেলওয়ের ভাওয়ালগাজীপুর এবং রাজেন্দ্রপুর সেকশনে ২০ ফুট রেললাইন কেটে ফেলা হয়। ভোরে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে।
ট্রেনের ইঞ্জিন এবং ছয়টি কোচ লাইন থেকে ছিটকে পড়লে একজন নিহত হয়। আহত হয় অনেকে। ওই ঘটনায় পুরো একদিন ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
সবশেষ মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় পুড়ে যায় তিনটি বগি। যাত্রী ভর্তি এ ট্রেনে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন চারজন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে হাইটেক সিটি অংশে মৌচাকে রেলওয়ের ২৬ নম্বর সেতুর অ্যাপ্রোচে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। সেদিন ১৪ নম্বর সেতুতে রেলের ফিসপ্লেট এবং বোল্ট খুলে ফেলা হয়। এদিন মৌচাক ইয়ার্ডে ককটেলের বিস্ফোরণ এবং ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে অবরোধ সমর্থকরা।
হরতাল-অবরোধের মধ্যে নন্দনগাছি, রাজশাহী কোর্ট, পাকশী, আড়ানিসহ রেলপথের কয়েকটি এলাকায় রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন অপরোধকারীরা।
অবরোধ চলার সময় ১ নভেম্বর ঈশ্বরদী এবং ঈশ্বরদী বাইপাস সেকশনে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা ছুঁড়ে মারা হয়। এতে লোকোমোটিভের জানলার কাঁচ ভেঙে যায়।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জানিয়েছে, ২৭ অক্টোবর ঈশ্বরদী ওয়াশপিট লাইনে যাওয়ার সময় একটি ট্রেনের কোচে আগুন ধরিয়ে দিলে কয়েকটি সিট পুড়ে যায়। ১৫ ডিসেম্বর উত্তরা এক্সপ্রেস জয়পুরহাট স্টেশনে ঢোকার সময় একটি কোচে আগুন দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। এতে ওই ট্রেনের সিট পুড়ে যায়।
হরতাল-অবরোধের মধ্যে ট্রেনে নাশকতা ঠেকাতে আগামি কয়েকদিনের মধ্যে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য নিয়োজিত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
মঙ্গলবার রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেছেন, “এ পর্যন্ত ২৭০০ আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দুই একদিনের মধ্যে এই জনবল পেয়ে যাব।”
ঝুঁকি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার রুটের উদাহরণ টেনে সুজন বলেন, “রেলওয়ের কাছে খবর আছে চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক জায়গায় ইতিমধ্যেই রেলের যন্ত্রাংশ খুলে ফেলা হয়েছে। অনেক জায়গায় চুরি করা হয়েছে। এসব বিষয় রেল চলাচলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।”
রেলের নাশকতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, আগে বাসে ট্রাকে, সিএনজিতে আগুন দিত। এখন রেলকে আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য বানানো হচ্ছে।
“যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে সেখানে রাজনৈতিকভাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু রেলকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফেলে জনজীবন এবং জনগণের নিরাপদ ট্রেন যাত্রায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছেন এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তবে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, সরকার পতনে তারা যে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন, তা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে সরকার নিজেরা নাশকতা করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
ট্রেনে নাশকতা ঠেকাতে ২৭০০ আনসার
ঢাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নাশকতার আগুন, মা-শিশুসহ নিহত ৪
ভোরে ২ ট্রেনের মাঝের এক ঘণ্টায় কাটা হয় লাইন
হরতাল শুরুর আগে জামালপুরে ট্রেনে আগুন, আহত ১০