রেলের বর্তমান জনবল দিয়ে এই ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ালেও সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
Published : 19 Dec 2023, 02:01 PM
হরতাল-অবরোধের মধ্যে ট্রেনে নাশকতা ঠেকাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ২৭০০ আনসার সদস্য নিয়োজিত করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
রেলের বর্তমান জনবল দিয়ে চলমান নাশকতা ঠেকানো ‘কঠিন হলেও’ সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
মঙ্গলবার রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে রেলমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিদিন সারাদেশ তিনশ ট্রেন চলাচল করে। আর রেলযাত্রা নিরাপদ করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
নিরাপত্তা দিতে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এ পর্যন্ত ২৭০০ আনসার সদস্য চাওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দুই একদিনের মধ্যে এই জনবল পেয়ে যাব।”
বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে নেত্রকোণা থেকে এসে ঢাকায় ঢোকার পথে মঙ্গলবার ভোরে অগ্নি নাশকতার শিকার হয় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। এ ঘটনায় পুড়ে যায় ট্রেনটির তিনটি বগি। একটি বগি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মা ও তার শিশু সন্তানসহ চারজনের লাশ।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল ও রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলায় ভোররাতে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। তাতে একজন নিহত এবং লোকো মাস্টারসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াতের দফায় দফায় হরতাল অবরোধে, ঢাকা, সিলেট জামালপুর, জয়পুরহাট, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় বিএনপিকেই দায়ী করে আসছে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
এই ধরনের ঘটনার পেছনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের যোগসূত্রতা দেখতে পাচ্ছেন মন্ত্রী সুজন।
তিনি বলেন, “আগে বাসে ট্রাকে আগুন দিত। এখন সেগুলো কিছুটা কমেছে। এখন রেলকেই আক্রমণের লক্ষ্য বানানো হয়েছে।“
তবে এসবের মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “রেলের বর্তমান জনবল দিয়ে এই ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সারাদেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।“
রেল লাইন উপড়ে বা কেটে ফেলা এবং বগিতে আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গ ধরে রেলমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ধারণা করছেন এ ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
“আইন শৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তাদেরকে চিহ্নিত করা গেলে তারা এটা আর কনটিনিউ করতে পারবে না,” বলেন মন্ত্রী।
মন্ত্রীর ভাষ্য, “যাত্রী বেশে ট্রেনে উঠে আগুন দিলে রেলের পক্ষে যাত্রা নিরাপদ করা কখনো সম্ভব হবে না। ২০১৩-২০১৪ সালেও আন্দোলনের নামে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এখনও একইভাবে চলছে।“
বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ট্রেনে অগ্নি নাশকতার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রতিবেদন হাতে আসার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন থেকে দৃষ্টি ফেরাতে সরকার ‘নিজেরা নাশকতা করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
এর জবাবে সুজন বলেন, “গাজীপুরের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভী সাহেব নিন্দা জানিয়েছেন। কিন্তু যখনই কর্মসূচি দিচ্ছেন, তখনই এমন ঘটনা ঘটছে। তারা মনে করছে আমরা যদি রেল চলাচল বন্ধ করতে পারি তাহলে আমাদের কর্মসূচি সফল হবে।“
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি জনগণ ‘ভালোভাবে নিচ্ছে না’ বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
রেলে নাশকতাকারীরা ফৌজদারি অপরাধ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতেই পারে। যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে তা রাজনৈতিকভাবে বিবেচিত হবে, কিন্তু রেলকে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফেলে জনজীবন এবং জনগণের যে নিরাপত্তা দরকার- এটিকে বড় ধরনের হুমকিতে ফেলেছে।
“বিশেষ করে যখন এ রেলকে অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আমরা একে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষের কাছে রেলকে আরো বেশি জনপ্রিয় করার জন্য অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।”
রেলকে নিরাপদ রাখতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আছে, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে যে যে জেলায় রেল যাচ্ছে সেখানে যেন নাশকতা ঘটতে না পারে তাতে যেন তারা সহযোগিতা করে। এই নিরাপত্তার বিষয়টিকে মাথায় রেখে স্বরাষ্ট্র ও রেল মন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে।”
জানুয়ারিতে কক্সবাজার ও মোংলায় নতুন ট্রেন
জানুয়ারির ১ তারিখে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল চলাচল শুরুর পাশাপাশি ঢাকা থেকে কক্সবাজারে নতুন ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “জনগণের চাহিদা বিবেচনা করে আরেকটি ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজারে চালানোর পরিকল্পনা করেছি আমরা।”
আরও পড়ুন
ঢাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে নাশকতার আগুন, মা-শিশুসহ নিহত ৪
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নাশকতা, ট্রেনে আগুন: ডিএমপি কমিশনার