Published : 17 May 2016, 06:37 PM
আমার বাবা কবি সিকদার আমিনুল হকের সাথে স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় থেকেই পশ্চিম বাংলার লেখকদের সাথে অত্যন্ত হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল। তখনও বাবার একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশ হয়নি। তবে `স্বাক্ষর' নামক সাহিত্যপত্রিকাটি সেখানে যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছিল। বাবার কলকাতা সফরের সুবাদে সেখানকার লেখকরা পূর্ব বাংলার সাহিত্য সম্পর্কে একটা ধারণা পেতেন। পূর্ব বাংলার পত্রিকা, কবিতার বইপত্র পেতেন। বাবার প্রচারবিমুখ স্বভাব ও নিজেকে আড়াল করে রাখাকে তাঁরা ভালবাসতেন, ভালবাসতেন সবার সাথে তাঁর আন্তরিক সম্পর্ককে। কবি বিষ্ণু দের সাথে বাবার ছিল মধুর এক সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক আমার মা থেকে শুরু করে বাবার পরিবারের অন্যান্যদের সাথেও ছিল। কলকাতাতে বাবাকে কবি সাহিত্যিকরা সম্বোধন করতেন 'আমিনুল' বলে। সেখানে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অসীম রায়, সুজাতা প্রিয়ংবদা, কালীকৃষ্ণ গুহ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সমরেশ বসু, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, শিবনারায়ণ রায়, উমাশংকর বন্দোপাধ্যায়সহ আরো অনেকের সাথে পূর্ববাংলার 'আমিনুল'-এর সখ্য গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে চিঠিপত্রে তাঁরা যোগাযোগ রেখেছিলেন। তাঁরা সবাই মনোকষ্টে ছিলেন ৭০-এর সাইক্লোনের ভয়াবহতায়। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উদগ্রীব ছিলেন। বাবার চিঠির বিশাল ভাণ্ডার থেকে তাদের লেখা কিছু চিঠি দেয়া হলো এখানে। পরবর্তীকালে বাকি বেশ কিছু চিঠি ছাপা হবে কবির লেখা চিঠি ও কবিকে লেখা কবি সাহিত্যিকদের চিঠি নিয়ে নতুন এক গ্রন্থে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর আর্টস বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা পাঠকের কাছে চিঠিগুলো পৌঁছে দেবার জন্য।–সালমান তারিক মিশা
প্রিয়বরেষু
এবারে 'দূরের কার্নিশ' পেয়েছি। কি বলব? ধন্যবাদ? বাহুল্যমাত্র।
কবিতাগুলি একবার দেখেছি। লিখে যেতে হবে। যেমন আমাদের সকলকেই হয়। তাই না? আমার ডান হাতটা ভেঙে গিয়েছিল। এখনও সারে নি। এই গ্রামে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে একদিন দেরি হয়ে গিয়েছিল। গতবছরে মে মাসে। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সের ব্যাপারটা তো আছেই।
তাছাড়া একটা হার্নিয়ার পরে আরেকটা ভোগাচ্ছে সেটা নাকি অপারেশন করা শক্ত। কি আর করা যাবে?
সিকদার স্বয়ং আমাদের শুভেচ্ছা জানবেন এবং জলি-কে জানাবেন। পুত্রের কি খবর? কবিতাগুলি পড়েছি। শক্ত, তবে মনে হয়েছে কবির মন সজাগ অবশ্য আত্মসচেতনও বোধহয়। সেটা ভালোই, না?
আর কি খবর আপনাদের?
হাত বলছে থামো।
শুভাকাঙ্ক্ষী বিষ্ণু দে
প্রিয়বরেষু,
অনেকদিন পরে আপনার চিঠি পেয়ে খুশি হয়েছি বেশ। এবং দেখা হতে পারে জেনেও। জানুয়ারির শেষদিকে থাকছি। বন্যার খবর আমরা দূর থেকে প্রচুর পেয়েছি, কষ্ট পেয়েছি সবাই। তারপরে নির্বাচনের খবরে উম্মুখ হয়ে আছি।
'সাম্প্রতিক' বেরোচ্ছে না? রাজশাহীর দুটি পত্রিকাও পাই না। 'বই' পত্রটি কিরকম? 'স্বদেশ'? 'পরিক্রমা'? আমি নিজেকে অনিশ্চিত মনে করছি, কবিতার সংকলনের ইচ্ছাই প্রথমে ছিল, কিন্তু মনে হয় সব পড়ি নি, যা পড়া উচিত ছিল। দেখি কি করতে পারি। প্রকাশকরাও কিছুকাল দুস্থদিনযাপন করছেন, বইয়ের পাড়াতেই দিনগুলি বড় অস্থির। দক্ষিন পাড়ার তুলনায় গোলমাল কম, কিন্তু বইয়ের কারবার এদিকে নগন্য।
ভাষা আন্দোলনসংক্রান্ত একটি বই পড়ে কৃতজ্ঞ বোধ করেছি। উমর সাহেবকে লিখে জানাব কিনা ভাবছি।
আপনি এলে অবশ্যই জানাবেন। কোন ঠিকানায় থাকবেন ইত্যাদি। আমি থাকি দক্ষিণে লেকমার্কেট অঞ্চলে, পারভেনু পাড়ায়। সস্ত্রীক আসছেন?
শামসুর রাহমানের সঙ্গে দেখা হলেও বেশ হত।
শুভেচ্ছাসহ আপনাদের
বিষ্ণু দে।
সিকদার আমিনুল হক
প্রীতিভাজনেষু,
তোমার চিঠি যথা সময়ে পেয়েছিলাম। তোমাকে আমার মনে থাকবে না কেন, খুব ভালোই মনে আছে। মাঝখানে আমি রাশিয়া গিয়েছিলাম, সেই জন্য তক্ষুনি উত্তর দিতে পারি নি। তুমি আমার কাছে যে লেখা চেয়েছিলে, তাও দিতে পারিনি ঐ কারণে। পরে কখনো আগে থেকে বেশি সময় পেলে নিশ্চয়ই লেখা দেবো। ভালো আছো নিশ্চয়ই। বাংলাদেশে প্রায়ই যেতে ইচ্ছে করে। সুযোগ সুবিধে করে যে কোনো দিন উপস্থিত হতে পারি।