‘টেইক ইট ডাউন’ অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে তারা নিজেদের ছবি ও ভিডিও সম্পর্কে নিজেরাই অভিযোগ জানাতে পারেন।
Published : 28 Feb 2023, 05:39 PM
ইন্টারনেট থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন নিপীড়নের ছবি সরানোর উদ্দেশ্যে নকশা করা নতুন এক প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ‘দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়েটেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি)’। আর এতে প্রাথমিক অনুদান দিয়েছে মেটা।
এক ব্লগ পোস্টে মেটা বলেছে, তারা এনসিএমইসি’র ‘টেক ইট ডাউন’ নামের ওই বিনামূল্যের টুল তৈরির জন্য অনুদান দিয়েছে। ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রেখে এটি অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ‘নগ্ন, আংশিক নগ্ন, বা যৌনতার ছবি বা ভিডিও’র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো ও অপসারণের পাশাপাশি ‘আপত্তিকর’ কনটেন্ট পুনরায় শেয়ার করার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়।
ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের পাশাপাশি ‘ওনলিফ্যানস’, ‘পর্নহাব’ ও ‘ইউবো’র মতো সাইটগুলোও নিজস্ব প্ল্যাটফর্মকে একীভূত করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
টেইক ইট ডাউন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে তারা নিজেদের ছবি ও ভিডিও সম্পর্কে নিজেরাই অভিযোগ জানাতে পারেন। এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরাও বিভিন্ন এমন কনটেন্ট নিয়ে অভিযোগ জানাতে বা সরাতে পারবেন, যেখানে তাদের বয়স ১৮’র কম ছিল।
এর পাশাপাশি, মা-বাবা বা অন্যান্য বিশ্বাসযোগ্য অভিভাবকরাও কোনো শিশুর পক্ষে অভিযোগ জানাতে পারবেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ।
নতুন প্ল্যাটফর্মের ‘এফএকিউ’ পেইজ বলছে, সেবাটি ব্যবহারের জন্য অবশ্যই ব্যবহারকারীদের নিজস্ব ডিভাইসে প্রশ্নবিদ্ধ ছবি বা ভিডিওটি থাকতে হবে। তবে, এইসব কনটেন্ট অভিযোগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জমা দেওয়া হয় না, বরং ব্যক্তিগত হিসাবেই থাকে।
The past doesn’t have to define your future.
— National Center for Missing & Exploited Children (@MissingKids) February 27, 2023
You can’t go back and unsend, but we can help remove your explicit images online so you can move forward.
Learn more: https://t.co/2QBSv9DqFV#SafeChildhood #NCMECTakeItDown pic.twitter.com/M528DDe9cm
এর পরিবর্তে, ওই কনটেন্ট একটি মানদণ্ড তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। আর প্রতিটি ছবি ও ভিডিও’র জন্য একটি করে বিশেষ ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট বরাদ্দ রয়েছে, যা এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা প্ল্যাটফর্মগুলোকে সম্ভবত নিজেদের ওয়েবসাইট ও অ্যাপে এমন কনটেন্ট শনাক্তে ও সরানোর উদ্দেশ্যে দেওয়া হবে। এর ফলে, মূল কনটেন্ট দেখা ব্যক্তির সংখ্যাও কমে আসবে।
“আমরা এই সিস্টেম তৈরি করেছি কারণ অনেক শিশুই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন।” --বলেন এনসিএমইসি’র প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী মিশেল ডুলুন।
“আমাদের প্রত্যাশা, শিশুরা এই সেবা সম্পর্কে সচেতন হবে। আর তারা স্বস্তি অনুভব করবে যে ছবিগুলো নামিয়ে আনতে সহায়তা করার সরঞ্জাম আছে। এনসিএমইসি এখানে সহায়তা দিতেই এসেছে।”
টেইক ইট ডাউন সেবাটির সঙ্গে তুলনা করা যায় ‘স্টপএনসিআইআই’ নামের সেবার সঙ্গে। ২০২১ সালে সেবাটি চালু হয়েছে সম্মতি ছাড়া ১৮’র চেয়ে বেশি বয়সীদের ছবি শেয়ারিং বন্ধ করতে। এই সেবাতেও ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও বাম্বলের মতো প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন আপত্তিকর কনটেন্ট শনাক্তে ও সরানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মানদণ্ড ব্যবহৃত হয়।
২০২২ সালের নভেম্বরে এনসিএমইসি’র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ঘোষণার পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম ও ফেইসবুকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষার জন্য কয়েকটি নতুন প্রাইভেসি ফিচার চালু করেছে মেটা। এর মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে ব্লক করার পর তার অ্যাকাউন্ট রিপোর্ট করা, কিশোর বয়সীদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন এমন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য মেসেজ বাটন সরানো, যাদের ব্লক হওয়ার অতীত ইতিহাস আছে ও ১৬ বছর (কিছু দেশে ১৮ বছর) বয়সী ফেইসবুক ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে ডিফল্ট হিসাবেই কঠোর প্রাইভেসি সেটিং রাখার মতো বিষয়গুলো।
এই প্রকল্পে অংশগ্রহনকারী অন্যান্য প্ল্যাটফর্মও অপ্রাপ্তবয়স্কদের কেন্দ্র করে তৈরি বিভিন্ন আপত্তিকর কনটেন্ট ঠেকানো ও সরানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌনতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কনটেন্ট শনাক্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানব নিয়ন্ত্রিত বেশ কিছু মডারেশন টুল চালু করেছে ফরাসী সামাজিক নেটওয়ার্কিং অ্যাপ ‘ইউবো’। এদিকে, অবৈধ বা কনসেন্ট ছাড়া নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত বিভিন্ন কনটেন্ট সরানোর জন্য অনুরোধ জানানোর ব্যবস্থা চালু করেছে পর্ন সাইট পর্নহাব।
প্রকল্পে অংশ নেওয়া পাঁচটি প্ল্যাটফর্মই অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন হয়রানি থেকে রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় এর আগে সমালোচিত হয়েছে।
২০২১ সালে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোনো শিশু সহজেই ‘অনলিফ্যানস’ সাইটের বয়স যাচাইকরণ ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে পারে। একই বছর পর্নহাবের বিরুদ্ধে মামলা করেন যৌন নিপীড়নের শিকার ৩৪ ভুক্তভোগী। তাদের অভিযোগ, সাইটটি জেনে বুঝে ধর্ষণ, শিশুর ওপর যৌন নিপীড়ন, মানব পাচার ও কনসেন্টবিহীন অন্যান্য কনটেন্ট থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।
‘কিশোর-কিশোরীদের টিন্ডার’ হিসেবে পরিচিত ইউবো অ্যাপটিও বিভিন্ন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ধর্ষণের শিকার বানাতে চাওয়া ব্যক্তিদের হাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গত বছর এনসিএমইসি অনুমান প্রকাশ করে, মেটার নিজস্ব প্ল্যাটফর্মগুলোতে ‘এন্ড-টু-এন্ড’ এনক্রিপশনের পরিকল্পনা শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের ৭০ শতাংশ উপাদান কার্যকর উপায়ে গোপন করে ফেলতে পারে।
“যখন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো শিশুদের যৌন নিপীড়নের উপাদান শনাক্তের কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়াই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন চালু করে, তখন শিশু সুরক্ষায় এর প্রভাব বিধ্বংসী হয়।” --এ মাসের শুরুতে ‘সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটি’র কাছে বলেন ডুলুন।
টেইক ইট ডাউনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে, বিদ্যমান মানদণ্ড ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারী প্ল্যাটফর্মগুলো ‘সর্বজনীন বা এনক্রিপশন ছাড়া’ সাইট ও অ্যাপগুলোতে থাকা আপত্তিকর ছবি শনাক্ত করে সেগুলো সরাতে পারবে।
তবে, এটা মেসেঞ্জারের মতো মেটার বিভিন্ন এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সেবার বেলায় প্রযোজ্য হবে কি না, সেটি পরিষ্কার নয়।