রাশিয়াভিত্তিক অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা ‘ক্যাসপারস্কি’র পণ্য ব্যবহারে সতর্ক থাকার কথা বলেছে জার্মানি। জার্মানির আশঙ্কা, নিজ দেশের আইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাইবার হামলায় অংশ নিতে বাধ্য করতে পারে রাশিয়া।
Published : 16 Mar 2022, 01:14 PM
রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগে থেকেই লাগাতার সাইবার হামলার শিকার হয়ে আসছিল ইউক্রেইন, ২৪ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে বেড়েছে হামলার মাত্রা। তবে, এখন পর্যন্ত অনলাইন-অফলাইন কোনো ক্ষেত্রেই নিশ্চিত জয় পায়নি রাশিয়া।
এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির ‘ফেডারেল অফিস ফর ইনফর্মেশন সিকিউরিটি (বিএসআই)’ এক বিবৃতিতে বলেছে, নিজ দেশের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুপ্তচরবৃত্তি বা সাইবার হামলায় অংশ নিতে বাধ্য করতে পারে রাশিয়ার সরকার।
তবে, ক্যাসপারস্কির দাবি, ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে” ওই সতর্ক বার্তা জারি করা হয়েছে এবং রাশিয়া সরকারের সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই প্রতিষ্ঠানটির।
বাজারে প্রচলিত ক্যাসপারস্কির কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ে কোনো অভিযোগ তোলেনি বিএসআই। তবে, ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, নেটো এবং জার্মানির উদ্দেশ্যে রাশিয়ার হুমকি-ধামকি সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
“রাশিয়ার আইটি উৎপাদকরাও আক্রামণ চালাতে পারে, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা চালাতে বাধ্য করা হতে পারে, অথবা নিজের অজান্তেই সেবাগ্রাহকদের উপর হামলা চালানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।”-- সতর্কতা বার্তায় বলেছে বিএসআই।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন দুর্বল না হয়ে পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে ক্যাসপারস্কির অ্যান্টিভাইরাস বিকল্প সফটওয়্যার দিয়ে প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে বিএসআই।
২০১৭ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাসপারস্কির সফটওয়্যার নিষিদ্ধ করে আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
ওই একই বছরেই ক্যাসপারস্কির অ্যান্টিভাইরাস জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সরকারের সকল বিভাগে সতর্ক বার্তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য।
বিএসআই-এর সতর্ক বার্তা পেয়ে ক্যাসপারস্কির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে আইনরাখট ফ্র্যাঙ্কফুর্ট ফুটবল ক্লাব। ক্লাবের মুখপাত্র এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গকে বলেছেন, “আমরা ক্যাসপারস্কির ব্যবস্থাপনাকে নোটিশ দিয়েছি যে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তি বাতিল করছি।”
এমন পরিস্থিতিতে ক্যাসপারস্কি বিএসআই-এর কাছ থেকে আরো স্বচ্ছতা দাবি করবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতার বক্তব্য, আলোচ্য সিদ্ধান্তটি “ক্যাসপারস্কি পণ্যের কারিগরি মূল্যায়নের ভিত্তিতে নেওয়া হয়নি”। সংস্থাটির আশঙ্কা দূর করার সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কেও জানতে চাইবে ক্যাসপারস্কি।
ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে “রাশিয়া বা অন্য কোনো সরকারের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই” বলে দাবি করেছে ক্যাসপারস্কি।
২০১৮ সালেই নিজস্ব ডেটা প্রসেসিং অবকাঠামো সুইজারল্যান্ডে সরিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। “আমাদের সেবা ও নির্মাণ প্রকৌশলের নিরাপত্তা এবং নির্ভরযোগ্যতা স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে,” প্রতিক্রিয়ায় বলেছে ক্যাসপারস্কি।
“আমরা বিশ্বাস করি যে শান্তিপূর্ণ আলোচনাই দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র উপায়। যুদ্ধ কারো জন্যই ভালো নয়।”
কিন্তু সপ্তাহদুয়েক আগেই একই ধরনের বক্তব্য টুইট করে কড়া সমালোচনার মুথে পড়েছিলেন ক্যাসপারস্কি প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন ক্যাসপারস্কি।
We welcome the start of negotiations to resolve the current situation in Ukraine and hope that they will lead to a cessation of hostilities and a compromise. We believe that peaceful dialogue is the only possible instrument for resolving conflicts. War isn’t good for anyone.
— Eugene Kaspersky (@e_kaspersky) March 1, 2022
প্রতিত্তুরে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ট্রেন্ডমাইক্রো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক ফার্গুসন টুইট করেছিলেন, “আগ্রাসনকে ‘পরিস্থিতি’ আখ্যা দিয়ে ‘আপোস’ করতে বলার চেয়ে চুপ থাকাই ভালো ছিল।”