ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি।
Published : 07 Dec 2017, 09:58 AM
জেলার জজ আদালতের স্পেশাল পিপি শেখ আবুল হাসেম জানান, আটটি মামলা, স্বাক্ষী না আসা, প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া – এসব জটিলতার ব্যাপার রয়েছে।
২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ঈদের পরদিন ময়মনসিংহের অলকা, ছায়াবাণী, পূরবী ও অজন্তা সিনেমা হলে প্রায় একই সময় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়; আহত হন আরও দুই শতাধিক।
বর্তমান সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, হামলার এসব ঘটনায় প্রথমে চারটি মামলা হলেও পরে তা আটটিতে রূপান্তরিত হয়; বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে চারটি ও হত্যার অভিযোগে চারটি।
পুলিশ সুপার বলেন, আসামিদের মধ্যে ভাগ্নে শহীদ কারাগারে। আর সালেহীন ও বোমা মিজানকে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয় ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। তবে বোমা মিজান এর পরদিনই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
আটকের পর সালেহীন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
পুলিশ সুপার আনিসুর বলেন, ২০০৬ সালের ৬ জুন জামালপুরের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘জেএমবি নেতা ও শূরা সদস্য’ সালেহীন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে চার সিনেমা হলে বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
“২০০২ সালে প্রথমে জামালপুরে ও পরে ময়মনসিংহে মিটিং করে চার সিনেমা হলে হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তারপর প্রায় একই সময় হামলা চালানো হয়।”
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তৎকালীন জেলা আওয়া মীলীগের সভাপতি মতিউর রহমান (বর্তমান ধর্মমন্ত্রী) ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৩১ জনকে।
“আর পুলিশ প্রথমে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল ৪৩ জনের বিরুদ্ধে। পরে সালেহীনের দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক মতিউর রহমান, সাবের হোসেনসহ ৪০ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।”
নির্দোষ ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়া ও প্রকৃত অপরাধ প্রমাণে মামলার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
জেলার জজ আদালতের স্পেশাল পিপি শেখ আবুল হাসেম বলেন, প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তিন আসামির মধ্যে দুইজনকে ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এক পুলিশকে হত্যা করায় কাজ বাড়ে। নানা রকম বিষয় মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রয়েছে বলে তিনি জানান।
আহত রাজিব হোসেনের বাবা মোসলেম উদ্দিন বলেন, “আমি আমার ছেলেটাকে নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। আল্লা যদি ওর মরণ দিত তাহলেও মনে হয় আমি এ যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতাম।”
আহত অপারেটর ফজল মিয়া বলেন, “পা হারিয়ে পথে বসে গেছি। সরকার আমাদের তেমন কিছুই সাহায্য-সহযোগিতা করে না। তাই বেঁচে থেকেও পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-না-খেয়ে থাকতে হয়।”
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহামান বলেন, “মামলাটি অনেক বছর হলেও নিষ্পত্তি না হওয়া দুঃখজনক। দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমি নিজে আদালতে হাজির হয়ে আবেদন করব।”
আহতরা তার কাছে গেলে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।