প্রথম দুই ঘণ্টায় গোলযোগের কোনো খবর আসেনি। আবহাওয়া ভালো হলে এবং বেলা বাড়লে ভোটারদের আনাগোনাও বাড়বে বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা আশা করছেন।
Published : 08 May 2024, 11:06 AM
আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করে দেশের অনেক এলাকায় উপজেলা নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে।
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে বুধবার সকাল ৮টায় দেশের ১৩৯ উপজেলায় ভোট শুরু হয়েছে, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, দিনের শুরুতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এর মধ্যে অনেক এলাকায় বৃষ্টি থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রার্থীরা।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক মঙ্গলবার বলেছিলেন, বুধবার ভোটের দিন তেমন ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তবে রাতে বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রা কমবে।
কিন্তু নাটোর, মাদারীপুর, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। অনেক এলাকায় হালকা বৃষ্টিও চলছে। এর মধ্যেই নির্বাচন কর্মকর্তারা কেন্দ্র সাজিয়ে ভোটারের অপেক্ষায় বসে আছেন।
তবে প্রথম দুই ঘণ্টায় গোলযোগের কোনো খবর আসেনি কোনো জেলা থেকে। আবহাওয়া ভালো হলে এবং বেলা বাড়লে ভোটারদের আনাগোনাও বাড়বে বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা আশা করছেন।
গাজীপুর
গাজীপুর জেলায় ভোট হচ্ছে তিন উপজেলায়। সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলছে। এমন আবহাওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। তবে গাজীপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান জানিয়েছেন।
তিনি জানান, গাজীপুরে তিন উপজেলায় ২৫৮টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এসব কেন্দ্রে ভোটার মোট ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৬ জন।
গাজীপুর সদরে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং কাপাসিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২ জন লড়ছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসান বলেন, বৃষ্টি নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন তিনি। তারপরও ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে। কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই চলে৷
প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুরুর দিকে ভোটার উপস্থিতি কম৷ বেলা বাড়লে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তারা আশা করছেন৷
বন্দর ইউনিয়নের কুশিয়ারা গ্রামের হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের নারী ভোটকেন্দ্রের চারটি ভোটকক্ষে প্রথম ঘণ্টায় কোনো ভোট পড়েনি৷
প্রিসাইডিং অফিসার নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “সাধারণ নারী ভোটারদের সকালে কাজ থাকে। তাই তারা হাতের কাজ শেষ করে বেলা করেই ভোট দিতে আসে। তাছাড়া বৈরী আবায়াওয়ার কারণে আরও কম আসছেন।”
এ বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রে ছয়টি ভোটকক্ষের মধ্যে ৩ নম্বর কক্ষে প্রথম ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩টি ভোট পড়েছে৷ প্রিসাইডিং অফিসার মো. শাহিনূর জামান বলেন, “বৃষ্টির কারণে ভোটার সংখ্যা কম। সময়ের সাথে বাড়বে।”
পাশের ২৬ নম্বর কুশিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের আটটি ভোটকক্ষের তিনটিতে প্রথম ৩০ মিনিটে কোনো ভোট পড়েনি৷ সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত বাকি ভোটকক্ষগুলোর মধ্যে মাত্র একটিতে সর্বোচ্চ চারটি ভোট পড়েছে৷
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. বদরুল আলম বলেন, “আজ ভোর থেকে বৃষ্টি ছিল৷ তবে ভোটগ্রহণের আগে বৃষ্টি থেমে যায়৷ নির্দিষ্ট সময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও ভোটাররা কেন্দ্রে আসা শুরু করেননি৷”
নাটোর
নাটোর জেলায় সদর, সিংড়া ও নলডাঙ্গা উপজেলার ৩০২টি কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে ব্যালট পেপারে। সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেও আকাশ মেঘলা থাকায় নাটোর সদরের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটার তেমন চোখে পড়েনি।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ বলেছেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।
সিংড়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর নাটোর সদর ও নলডাঙ্গায় উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এ তিন উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
মাদারীপুর
মাদারীপুর সদর ও রাজৈর উপজেলা পরিষদের ১৮৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেছেন, “বৈরী আবহাওয়ায় ভোটার উপস্থিতি একটু কম হলেও আমরা আশা করছি আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে।”
মাদারীপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান শফিক খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন অংশ নিচ্ছেন।
রাজৈর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিন্দন্দ্বিতা করছেন।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় ভোট চলছে সদর ও খোকসা উপজেলায়। তবে ভোট শুরুর প্রথম ঘণ্টায় ভোটারদের দেখা মেলেনি সেভাবে। ভোট কেন্দ্রের আশপাশে প্রার্থীর সমর্থকদের জটলাও সেভাবে দেখা যায়নি।
জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, এ দুই উপজেলায় ভোটার মোট ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪১ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯৫টি।
গাইবান্ধা
গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় সকালে ভোট শুরু হয়েছে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মধ্যে। ফলে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম।
তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন প্রার্থী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।
রিটানিং কর্মকর্তা ও গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব জানান, সাঘাটা উপজেলায় ভোট কেন্দ্র ১০৩টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৬০টি। সবগুলো কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
সাঘাটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম সামশীল আরেফিন টিটু। ফুলছড়িতে চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী রয়েছেন। আর দুই উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন এবং সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের সদর, হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে দিনের শুরুতে কয়েকটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে খুবই কম।
জেলা শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. হোসেন আলী ও আজিমউদ্দিন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম বলেছেন, বেলা গড়ালে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
কিশোরগঞ্জের এই তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন ভোটের লড়াইয়ে আছেন।
সদর উপজেলার ভোটার ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৮১৮ জন, হোসেনপুরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৭ জন এবং পাকুন্দিয়ায় ২ লাখ ২৪ হাজার ৬৬৯ জন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোরশেদ আলম জানান, দিনের শুরুতে জেলার কোথাও কোনা ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
যশোর
যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলায় ভোট নেওয়া হচ্ছে ইভিএমে। মঙ্গলবার রাতে ঝড় হওয়ার কারণে অনেক কেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকলেও ইভিএমে ভোট গ্রহণে সমস্যা হচ্ছে না বলে প্রিসাইডিং অফিসাররা জানিয়েছেন।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা মনিরামপুরে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৫ জন। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কেশবপুর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার। চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মনিরামপুর মহিলা কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রোকনুজ্জামান বলেন, “সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। ভোটাররা সকাল থেকেই কেন্দ্রে আসা শুরু করেছেন।”